মুক্তাগাছা: ময়মনসিংহের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমে অবস্থিত মুক্তাগাছা উপজেলা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মণ্ডার জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলার ইতিহাস ঊনবিংশ শতাব্দীতে জমিদারদের অবদানের সাথে জড়িত। আচার্য্য চৌধুরী বংশের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরী, যিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের আস্থাভাজন ছিলেন, ১১৩২ সালে আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়ে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। তার চার ছেলে রামরাম, হরেরাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বগুড়া থেকে এখানে এসে বসবাস শুরু করেন।
এই এলাকার প্রাচীন নাম ছিল বিনোদবাড়ী। মুক্তারাম কর্মকার নামক এক ব্যক্তি জমিদারদের নজরানা হিসেবে একটি পিতলের গাছা দেন, যার নামানুসারে এলাকার নাম হয় মুক্তাগাছা। ১৯৬১ সালে মুক্তাগাছা থানা সৃষ্টি হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
মুক্তাগাছার আয়তন ৩১৪.৭১ বর্গ কিলোমিটার। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ৩,৬৬,৩৯৭ জন, আর ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৪১৫৪৭৩ জন। উপজেলার উত্তরে ময়মনসিংহ সদর ও জামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়ীয়া, পূর্বে ময়মনসিংহ সদর ও ফুলবাড়ীয়া এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইলের মধুপুর ও জামালপুর সদর উপজেলা অবস্থিত। আয়মন, শিরখালী, সুতিয়া, বরিল, হাওদা, বাইহা, খালিয়া, দাবিয়া, চিতল প্রভৃতি নদী ও বিল এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
মুক্তাগাছার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, পান, গম, আখ, সরিষা প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। শিল্পের ক্ষেত্রে তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার দিক থেকে উপজেলায় কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। রামকিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩), নগেন্দ্র নারায়ণ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭) প্রভৃতি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও প্রত্নসম্পদ:
মুক্তাগাছার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা এখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উপজেলায় বেশ কিছু প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, মাযার, জমিদার বাড়ি ও বধ্যভূমি রয়েছে। পাহাড় পাবইজানে বলাইশ্রুত মসজিদ, ভূঁইয়াবাড়ি মসজিদ, বালিয়াপাড়ার রাজার কোট, আটানী জমিদার বাড়ির শিব ও গোপাল মন্দির উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার:
মুক্তাগাছা তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। আগামীতে এ উপজেলার আরও উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।