জয়নাল আবেদীন

জয়নাল আবেদীন: একজন অনন্য ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব

জয়নাল আবেদীন (১৯৩৭-২০১৭) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ছিলেন। উর্দুভাষী পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও তিনি বাংলা ভাষার প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৩৭ সালের ১৫ই জানুয়ারী ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন জয়নাল আবেদীন। ১৯৪৭ সালে তার পরিবার বিহার থেকে পূর্ববঙ্গের সৈয়দপুরে চলে আসে। সেখানকার সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ভাষা আন্দোলনকালে তিনি একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। উর্দুভাষী হলেও তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে সোচ্চার সমর্থন প্রদান করেন এবং 'মাস্টার অব ওয়াল রাইটার' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাকে ‘বিহারি ঝনু’ নামেও ডাকা হতো। ১৯৫৭ সালে জং পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তিনি মর্নিং নিউজ, বাংলাদেশ টাইমস, চিত্রালী, ওয়াতন, এনায় সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও জয়নাল আবেদীনের অবদান অসামান্য। চকোরী, জনতা এক্সপ্রেস, আনাড়ি, পায়েল, ছোট সাহেব, রাজু, দংশন ও সংগ্রাম সহ অনেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র 'সঙ্গম' এর সংলাপ ও সঙ্গীত রচয়িতা ছিলেন। এছাড়াও, তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বিখ্যাত উপন্যাস 'চিলেকোঠার সেপাই' উর্দুতে অনুবাদ করেছেন।

২০১৭ সালের ৯ই মার্চ ঢাকায় জয়নাল আবেদীনের মৃত্যু হয়। তার স্মরণে রিপোর্টার্স ইউনিটি তাদের বার্ষিক সাংস্কৃতিক পুরস্কারের নামকরণ করে 'জয়নাল সাংস্কৃতিক পুরস্কার'। জয়নাল আবেদীন একজন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন যার অবদান সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • জয়নাল আবেদীন ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক।
  • তিনি একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
  • তিনি বাংলাদেশের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র 'সঙ্গম'-এর সংলাপ ও সঙ্গীত রচনা করেছেন।
  • তিনি 'চিলেকোঠার সেপাই' উর্দুতে অনুবাদ করেছেন।
  • ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অসামান্য।