ভাসানচর: নোয়াখালীর বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপ
মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত ভাসানচর বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত এই দ্বীপটি ২০১৯ সালের পূর্বে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত ছিল। মূলত, ২০০৬ সালে হিমালয়ের পলিমাটির সঞ্চয়ের ফলে এই দ্বীপটির সৃষ্টি হয়। ভাসানচরের আয়তন প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার (১৬,০০০ একর)। দ্বীপটির দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৪.৫ কিলোমিটার। হাতিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে, নোয়াখালী জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দ্বীপটিতে নৌকা ও হেলিকপ্টার ব্যতীত অন্য কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।
রোহিঙ্গা পুনর্বাসন:
মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরকে নিরাপদ আবাসনে রূপান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের জুনে প্রথম এই প্রস্তাবনা আনা হলেও, ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারী সরকার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেয়। আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসতি স্থাপনের জন্য বিপুল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১,৪৪০টি ব্যারাক হাউস, ১২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, উপাসনালয়, নৌবাহিনীর অফিস ভবন ও বাসভবন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি নিষ্কাশন ও সরবরাহ ব্যবস্থা, পেরিমিটার ফেন্সিং, ওয়াচ টাওয়ার, হেলিপ্যাড, মোবাইল টাওয়ার, রাডার স্টেশন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ভাসানচরে একটি থানা প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়।
অবকাঠামো ও উদ্বেগ:
ভাসানচরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করে। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য চারপাশে নয় ফুট উঁচু বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে, এবং যাতায়াত ব্যবস্থাও নাজুক। মানবাধিকার সংগঠনসমূহ ও রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে পুনর্বাসনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠেছে। যদিও সরকার বলেছে, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় ৪,০০০ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫,৬২৯ জন (৮,৪৭৭ পরিবার) ভাসানচরে বসবাস করছে।
ভবিষ্যৎ:
ভাসানচর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের একটি অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যখন মায়ানমারে ফিরে যাবে, তখন এই দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে এখনও অনেক উদ্বেগ রয়েছে ভাসানচরের নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিয়ে।