আবুল কাশেম

আবুল কাশেম: একাধিক পরিচয়ের অধিকারী এক মহান ব্যক্তিত্ব

"আবুল কাশেম" নামটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম (১৯২০-১৯৯১), একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত, লেখক এবং রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯২০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ছেদন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবন ছিল অসাধারণ সাফল্য ও সংগ্রামের এক অবিচ্ছেদ্য মিশ্রণ।

শিক্ষা জীবন শুরু হয় বরমা হাইস্কুল থেকে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি (অনার্স) ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন।

আবুল কাশেমের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ভাষা আন্দোলনে তার অবদান। ১৯৪৭ সালে তিনি ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ’ নামে একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। তার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের ভাষা আন্দোলনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন প্রধান নেতা। এই আন্দোলনের ফলেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

তিনি 'সৈনিক' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন যা ভাষা আন্দোলনের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৫৪ সালে পূর্ববাংলা আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকায় বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলা মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। উনিশ বছর ধরে তিনি এ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

আবুল কাশেম ছিলেন একজন অসাধারণ লেখক। তিনি পদার্থবিজ্ঞান, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং রাজনীতি বিষয়ক প্রায় এক শত গ্রন্থ রচনা করেন। তার লেখাগুলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত হন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) । ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবুল কাশেম কেবলমাত্র একজন ব্যক্তি ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন প্রতীক। তার জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত।
  • তিনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তিনি ‘সৈনিক’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক ছিলেন।
  • তিনি বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বাংলা মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেন।
  • তিনি একজন অসাধারণ লেখক এবং প্রায় একশ গ্রন্থ রচনা করেন।
  • তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত হন।