বীণা: ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রাচীন ও সম্মানিত বাদ্যযন্ত্র। সংস্কৃত ভাষায় ‘বীণা’ (वीणा) শব্দটি বিভিন্ন তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্রের জন্য একটি সাধারণ নাম। ঋগ্বেদ, সামবেদ, শতপথ ব্রাহ্মণ, তৈত্তিরীয় সংহিতা এবং অন্যান্য বৈদিক সাহিত্যে বীণার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে ল্যুট, জিথার এবং খিলানযুক্ত বীণা সহ বীণার বহু রকমের নকশা বিদ্যমান ছিল।
আঞ্চলিক নকশার ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে বীণার নামও ভিন্ন ভিন্ন; যেমন রুদ্র বীণা, সরস্বতী বীণা, বিচিত্র বীণা ইত্যাদি। উত্তর ভারতে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত রুদ্র বীণা একটি দণ্ড বাদ্যযন্ত্র, যার প্রায় ৩.৫ থেকে ৪ ফুট লম্বা একটি ফাঁপা শরীর এবং দুটি বড় অনুরণিত লাউ রয়েছে। এতে চারটি মূল তার এবং তিনটি ড্রোন তার থাকে। দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটিক শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত সরস্বতী বীণা ল্যুটের মত। এটি লম্বা গলা, নাশপাতি আকৃতির, তবে উত্তর ভারতীয় বীণার নিচের লাউয়ের পরিবর্তে এর নাশপাতি আকৃতির কাঠের টুকরা থাকে। এরও ২৪ টি ফ্রেট, চারটি মেলোডি তার ও তিনটি ড্রোন তার থাকে।
বীণা একটি ফ্রেটেড, প্লাকড ল্যুট। এটি সম্পূর্ণ তিন অষ্টক পরিসরে সুর তৈরি করতে পারে। এই বাদ্যযন্ত্রের দীর্ঘ ফাঁপা গলা ভারতীয় রাগের পোর্টামেন্টো প্রভাব ও লেগাটো অলঙ্কার তৈরিতে সাহায্য করে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে এর ব্যবহার বিস্তৃত এবং হিন্দু দেবী সরস্বতীর সাথে এর সম্পর্ক এটিকে ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান দিয়েছে। বীণা বাজনোর দক্ষ ব্যক্তিকে বীণাবাদক বলা হয়। নাট্যশাস্ত্রে ভরত মুনি বীণা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং মানুষের গলাকে বীণার সাথে তুলনা করেছেন। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে ঋষি নারদকে “বীণা বাদক” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আধুনিক যুগে, উত্তর ভারতের হিন্দুস্তানি সঙ্গীতে সেতার বীণার স্থান অনেকাংশে দখল করে নিয়েছে। তবে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটিক সঙ্গীতে সরস্বতী বীণা আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয়। বীণার বিভিন্ন নকশা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য আমরা পরবর্তীতে তথ্য আপডেট করব।