দক্ষিণ ভারত: একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও উন্নত অর্থনীতির আধার
ভারতের দক্ষিণাঞ্চল, যা উপদ্বীপীয় ভারত নামেও পরিচিত, এর বিশাল ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক অতীত এবং দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু এবং তেলেঙ্গানা- এই পাঁচটি রাজ্য এবং পুদুচেরি, লাক্ষাদ্বীপ ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর এবং দক্ষিণে হিন্দ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত এই উপদ্বীপের প্রকৃতি অসাধারণ। পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা এবং মধ্যবর্তী দাক্ষিণাত্য মালভূমি এই অঞ্চলের ভৌগোলিক সৌন্দর্য্যকে আরও সমৃদ্ধ করে। গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী, পেন্না, তুঙ্গভদ্রা এবং ভাইগাই নদীর জলরাশি এই অঞ্চলের জীবনধারাকে পুষ্ট করে।
দক্ষিণ ভারতের জনসংখ্যা প্রধানত চারটি দ্রাবিড় ভাষা- তেলুগু, তামিল, কন্নড় এবং মালয়ালম-ভাষী। ইতিহাস জুড়ে চালুক্য, চোল, পাণ্ড্য, পাল্লব, বিজয়নগর, রাষ্ট্রকূট, সাতবাহন, হৈসল প্রভৃতি রাজবংশের শাসন এই অঞ্চলের সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপীয়দের আগমন, ব্রিটিশ শাসন এবং পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রাম- সবকিছুই দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
স্বাধীনতার পর দক্ষিণ ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। জাতীয় গড়ের তুলনায় এখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেশি। তথ্য প্রযুক্তি, উচ্চ শিক্ষা, পর্যটন এবং কৃষিক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অবদান অপরিসীম। ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, কোচি প্রভৃতি শহর তথ্য প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে।
দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিও অতুলনীয়। কর্ণাটকের হোয়াসলা স্থাপত্য, তামিলনাড়ুর বৃহদীশ্বর মন্দির, কেরলের বেকার ও কাঞ্জিপুরামের রেশমি শাড়ি- এসব দক্ষিণ ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পদের কিছু দৃষ্টান্ত মাত্র। কর্ণাটিক সংগীত, ভারতনাট্যম, কুচিপুড়ি, কথকলী প্রভৃতি নৃত্যশিল্পও দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ। এই অঞ্চলের রন্ধনশিল্পও বিশ্বখ্যাত, বিভিন্ন রকমের মসলা ও নারকেলের ব্যবহার দক্ষিণ ভারতীয় খাবারকে এক অনন্য স্বাদের অধিকারী করে তুলেছে।
সারসংক্ষেপে, দক্ষিণ ভারত ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের এক অমূল্য সম্পদ। এর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও অগ্রগতিশীল অর্থনীতি বিশ্বের নজর কেড়েছে এবং ভবিষ্যতেও এর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।