বিরল উপজেলা: দিনাজপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, যা এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। ৩৫৩.৯৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৫°৩১´ থেকে ২৫°৪৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৬´ থেকে ৮৮°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে বোচাগঞ্জ ও কাহারোল, দক্ষিণে দিনাজপুর সদর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে দিনাজপুর সদর ও বোচাগঞ্জ এবং পুনর্ভবা নদী, এবং পশ্চিমে দিনাজপুর সদর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত।
জনসংখ্যা: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বিরলের জনসংখ্যা প্রায় ২৫৭,৯২৫ জন। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, মালো, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এখানে বসবাস করে। পুনর্ভবা ও টাংগন নদী এবং নাল বিল ও কড়াই বিল এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য: ১৯১৫ সালে বিরল থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বিরলের ইতিহাস রয়েছে ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহের সঙ্গেও যুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বিজোড়া ইউনিয়নের বহলায় ৩৭ জন নিরীহ লোককে পাকবাহিনী হত্যা করে এবং ১৫ ডিসেম্বর বগুলাখারীতে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এছাড়াও বহবল দীঘিতে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। এখানে সেনদীঘি, মুল্লুক দেওয়ান মাযার ও দীঘি, মেহেরাবীয়া জামে মসজিদ ইত্যাদি প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ রয়েছে।
অর্থনীতি: কৃষি এ উপজেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, গম, ভুট্টা, আখ, আলু, তিল, পিঁয়াজ, তৈলবীজ, শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, জাম প্রধান ফল-ফলাদি। রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, স’মিল, হাসকিংমিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ইত্যাদি শিল্পকারখানা রয়েছে। স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রধান কুটিরশিল্প।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: বিরল উপজেলায় ৮টি কলেজ, ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৭টি মাদ্রাসা রয়েছে। এখানে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ১৯৬৮ এবং ১৯৮৮ সালে বিরল বন্যার কবলে পড়েছিল। এসময় অনেক ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।