বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি): বাংলাদেশের সমুদ্রগামী পরিবহন ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য জাহাজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশের মাধ্যমে এর প্রতিষ্ঠা হয়। স্বাধীনতার পর নতুন রাষ্ট্রের জন্য সমুদ্রগামী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এর প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রাথমিকভাবে দুটি জাহাজ, "বাংলার দূত" এবং "বাংলার সম্পদ" নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিএসসি। বর্তমানে এর বহরে বিভিন্ন ধরণের ১৩ টি জাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে দুটি তেল ট্যাংকার। এই জাহাজগুলি রফতানি-আমদানি কার্যক্রম সহজতর করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে পোশাক, কৃষিপণ্য, এবং অন্যান্য পণ্যের পরিবহন। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করার ক্ষেত্রেও বিএসসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিএসসির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে অবস্থিত, যদিও ঢাকা এবং খুলনায়ও এর শাখা অফিস রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রী সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামে বিএসসির একটি আধুনিক সমুদ্রগামী কর্মশালাও রয়েছে, যা জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বিএসসি কেবলমাত্র বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দক্ষ জনবল গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার মাধ্যমে বিএসসি দেশের সমুদ্রগামী পরিবহন খাতের উন্নয়নে অবদান রাখছে। তবে, বয়স্ক জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়া, এবং নতুন আইন-কানুন মেনে চলার ক্ষেত্রে বিএসসিকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।
সাম্প্রতিককালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সময়, বিএসসির একটি জাহাজ "বাংলার সমৃদ্ধি" মিশাইল আঘাতের শিকার হয়, যার ফলে সংস্থাটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএসসির চ্যালেঞ্জ ও জটিলতাকে আরও প্রতিফলিত করে। তবে, সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।