ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের এক আলোকিত স্মৃতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই, ব্রিটিশ ভারতের অধীনে, অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থার আদলে এর যাত্রা শুরু হয়। ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা কেন্দ্র, ২০টি আবাসিক হল ও ৪টি ছাত্রাবাস নিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাবি কেবলমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গভঙ্গ বাতিলের একটি প্রতিক্রিয়া। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের ক্ষোভ দূরীকরণে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯১২ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। নাথান কমিটি, স্যাডলার কমিশনের প্রতিবেদনের পর ১৯২০ সালে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ পাশ হয় এবং এরপর এর কার্যক্রম শুরু হয়। বিভিন্ন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের অবদানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাতি লাভ করে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছেন। ১৩ জন রাষ্ট্রপতি, ৭ জন প্রধানমন্ত্রী, একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) এবং অনেক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, কলাকুশলী, এবং ক্রীড়াবিদ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এখানে পড়াশোনা করেছিলেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অবদান:
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক শহীদ এখানেই তাদের প্রাণ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
স্থাপত্য ও স্থান:
ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে রয়েছে ঐতিহাসিক কার্জন হল, কলা ভবন, শহীদ মিনার, অপরাজেয় বাংলা, তিন নেতার মাজার, এবং আরও অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই স্থাপনাগুলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক।
বর্তমান অবস্থা:
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার এক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। এটি গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছে এবং দেশের উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করছে। তবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর চাপ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, এবং অন্যান্য সমস্যার মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ নজর দিতে হবে।