শহীদ মিনার: বাংলা ভাষার অমর স্মৃতিস্তম্ভ
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, বাংলা ভাষা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা। এই দিনে, পাকিস্তানি শাসকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত ভাষা-সৈনিকদের অমর স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভই হল শহীদ মিনার। এটি কেবল একটি স্থাপনা নয়, বরং বাংলা ভাষা ও স্বাধীনতার প্রতি বাঙালির অদম্য আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
- *প্রথম শহীদ মিনার:** ২১ ফেব্রুয়ারির রাতেই রাজশাহী কলেজে ইট-কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল একটি স্মৃতিস্তম্ভ। পরদিন পুলিশ তা ভেঙে ফেলে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লিখে একটি কাগজের তৈরি মিনার তৈরি করে। এটিও ২৬ ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করা হয়। ঢাকা কলেজেও একইভাবে তৈরি করা শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়।
- *কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার:** ১৯৫৭ সালে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হস্টেল প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা অনুযায়ী, নভেরা আহমদের তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ ১৯৬৩ সালে সম্পন্ন হয়। শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম এটি উদ্বোধন করেন।
- *ঐতিহাসিক ঘটনা ও স্থাপত্য:** শহীদ মিনারের বর্তমান স্থাপত্য পাঁচটি স্তম্ভের সমন্বয়ে গঠিত। মাঝের স্তম্ভটি কিছুটা বড় ও সামনের দিকে হেলানো। স্তম্ভগুলোর মাঝে একটি লাল রঙের কাপড়ের বৃত্ত রয়েছে, যা লাল সূর্যের প্রতীক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী শহীদ মিনার ভেঙে দেয়। স্বাধীনতার পর এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
- *বিশ্বব্যাপী শহীদ মিনার:** একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য, জাপান, এবং অন্যান্য দেশে এটি বাংলা ভাষা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।
- *শহীদ মিনার: একটি অমর স্মৃতি:** শহীদ মিনার কেবল একটি স্মৃতিস্তম্ভ নয়; এটি বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা, স্বাধীনতা ও মুক্তির চিরন্তন প্রতীক। এটি বাঙালি জাতির অভিমান, আত্মত্যাগ ও সাহসের প্রতিনিধিত্ব করে।