ফরিদগঞ্জ: চাঁদপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত চাঁদপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল ফরিদগঞ্জ। প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এই উপজেলাটি তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির জন্য পরিচিত। ২৩°০৩´ থেকে ২৩°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪১´ থেকে ৯০°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত ফরিদগঞ্জের আয়তন ২৩২.২২ বর্গ কিমি। উত্তরে চাঁদপুর সদর ও হাজীগঞ্জ, দক্ষিণে রায়পুর, পূর্বে রামগঞ্জ এবং পশ্চিমে হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলা এর সীমানা।
- *জনসংখ্যা ও ভূগোল:** ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ফরিদগঞ্জের জনসংখ্যা ৩৯৬৬৮৩ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৮২৩৬০ এবং মহিলা ২১৪৩২৩। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ (৩৭৭৮৮৬) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রমুখ রয়েছে। ডাকাতিয়া নদী ও গোপ্তির বিল ফরিদগঞ্জের উল্লেখযোগ্য জলাশয়। ফরিদগঞ্জ শহরের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ২৩°০৭′৩৯″ উত্তর ৯০°৪৫′০৩″ পূর্ব, এবং সমুদ্র সমতল থেকে গড় উচ্চতা ১২.৩১ মিটার।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:** ৭ অক্টোবর ১৯১৮ সালে ফরিদগঞ্জ থানা গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কামালপুর, বাদারা বাজার, পাইকপাড়া, রূপসী বাজার, গাজীপুর প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হয় এবং ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৪ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। সাহেবগঞ্জের নীলকুঠি, লোহাগড়া মঠ, রূপসা জমিদার বাড়ি, রূপসা মসজিদ উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শন।
- *অর্থনীতি ও উন্নয়ন:** ফরিদগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আলু, আখ, পান প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। উপজেলায় বিভিন্ন ধরণের কুটিরশিল্প যেমন স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি বিদ্যমান। শিক্ষার দিক থেকে ৮ টি কলেজ, ৪৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৫২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ টি কমিউনিটি বিদ্যালয় এবং ২৩৭ টি মাদ্রাসা রয়েছে। ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড এবং ২১টি মহল্লায় বিভক্ত। পৌরসভার আয়তন ২.৪৭ বর্গ কিমি।
- *সংস্কৃতি ও পর্যটন:** ফরিদগঞ্জের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, লাইব্রেরী, মেলা এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। রূপসা হাট, গল্লাক হাট, গৃদকালিন্দিয়া হাট, চান্দ্রা হাট এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
ফরিদগঞ্জের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন এনজিও যেমন আশা, প্রশিকা, ব্র্যাক, বিআরডিবি, মহিলা উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। তবে পানীয় জলের উৎস এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আরও প্রচেষ্টার আবশ্যকতা রয়েছে।