লোহাগড়া

লোহাগড়া: নড়াইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা

বাংলাদেশের নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলা অঞ্চলটির ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। ২৮৪.৯১ বর্গ কিমি আয়তনের লোহাগড়া উপজেলার অবস্থান ২৩°০৫´ থেকে ২৩°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে মোহাম্মদপুর, দক্ষিণে কালিয়া, পূর্বে আলফাডাঙ্গা, কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জ সদর এবং পশ্চিমে নড়াইল সদর উপজেলার সীমানা লোহাগড়া উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে।

জনসংখ্যাগত দিক থেকে, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, লোহাগড়ার জনসংখ্যা ছিল ২২৮,৫৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০৯,৪৫০ এবং মহিলা ১১৯,১৪৪ জন। ধর্মীয়ভাবে, অধিকাংশ লোক মুসলিম (২০২,৯৩৩), যদিও হিন্দু (২৫,৬১৮) জনসংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। নবগঙ্গা, মধুমতি, এবং ইছামতি নদীসহ ছাতরা খাল, গণ্ডব খাল এবং বিভিন্ন বিল এই উপজেলার জলসম্পদকে সমৃদ্ধ করে।

লোহাগড়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬১ সালে, এবং ১৯৮৪ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। উপজেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর, যেখানে ধান, পাট, গম, সরিষা, পান, শাকসবজি প্রধান ফসল। অকৃষি কাজের মধ্যে ব্যবসা, পরিবহন, চাকরি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি ফল উৎপাদনেও এই উপজেলা সমৃদ্ধ।

ঐতিহাসিক দিক থেকে, লোহাগড়ার নলদী গাজীর দরগাহ ও রাধা গোবিন্দের মন্দির (জোড়বাংলা) উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইতনায় পাকসেনাদের হত্যাকাণ্ড এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য ঘটনা এই উপজেলার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। ইতনা গ্রামে একটি গণকবর রয়েছে যা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।

শিক্ষার দিক থেকে লোহাগড়া উপজেলায় ৬টি কলেজ, ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, ইতনা স্কুল এন্ড কলেজ, লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পড়ে।

সামগ্রিকভাবে, লোহাগড়া উপজেলা নড়াইল জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার নিজস্ব ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • লোহাগড়া নড়াইল জেলার একটি উপজেলা
  • ২৮৪.৯১ বর্গ কিমি আয়তন
  • ২০১১ সালে জনসংখ্যা ২২৮,৫৯৪
  • প্রধানত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি
  • ১৮৬১ সালে থানা, ১৯৮৪ সালে উপজেলা
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন