পারাচিনার: পাকিস্তানের কুররাম জেলার একটি ঐতিহাসিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর। আফগানিস্তান সীমান্তের নিকটবর্তী এই শহরটি দীর্ঘদিন ধরেই সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব এবং সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়ে আসছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও ইতিহাস: পারাচিনার কুররাম উপত্যকার পশ্চিমে অবস্থিত, পেশোয়ার থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে। আফগানিস্তানের কাবুল থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১১০ কিলোমিটার, যা পাকিস্তানের মধ্যে কাবুলের নিকটতম বিন্দু। ঐতিহাসিকভাবে, পারাচিনার একটি শিয়া-প্রধান অঞ্চল। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক সি.এম. এনরিকেজের বর্ণনা অনুসারে, প্রায় ২০০ বছর আগে পারাখেল গোত্রের নেতা মালিক পারে এই অঞ্চলে চিনার গাছ লাগিয়েছিলেন; যার নামানুসারেই এই স্থানের নামকরণ ‘পারাচিনার’ (চিনার গাছের নিচে) হয়েছে। ১৮৯৩ সালে দুর্নদ লাইনের সীমানা নির্ধারণের সময় এখানে ব্রিটিশ ও আফগান প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও সন্ত্রাসবাদ: দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় কারণে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে পারাচিনারে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই শহরে বহু সন্ত্রাসবাদী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে। এই হামলাগুলির ফলে পারাচিনার পেশোয়ারের পর পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বাধিক সন্ত্রাসবাদী আক্রান্ত শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরেও পারাচিনারে একটি ভয়াবহ বাস হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের কুররাম জেলার পারাচিনারে মহাসড়ক অবরোধের কারণে অন্তত ২৯ জন শিশু ওষুধের অভাবে মারা যায়।
অর্থনীতি ও অবকাঠামো: পারাচিনারের অর্থনীতি কৃষিকাজ ও আফগানিস্তানের সাথে বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। এখানে একটি বিমানবন্দর আছে, কিন্তু বর্তমানে তা কার্যকর নয়। থাল-পারাচিনার মহাসড়কটি শহরটিকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত করে। এফএটিএ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উপ-ক্যাম্পাস পারাচিনারে খোলার পরিকল্পনা আছে।
পরিবেশ: পারাচিনারের আবহাওয়া মৃদু আর্দ্র উপোষ্ণ। শীতকালে বরফ পড়ে এবং পেইওয়ার পাস ৫ মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
Key Information List