বাংলাদেশের নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে নির্মাণ খাতের অবদান অপরিসীম। দেশের উন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়নে এ খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই উন্নয়নের আড়ালে রয়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের কঠোর বাস্তবতা। তাদের কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি, অধিকার লঙ্ঘন, এবং নিরাপত্তাহীনতা দীর্ঘদিন ধরে একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান।
রানা প্লাজা ধসের মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে নির্মাণ শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। ২০১৩ সালের এই ধসে প্রায় এক হাজার শ্রমিক প্রাণ হারান। এর পরও নির্মাণ শিল্পে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭০০ এর বেশি নির্মাণ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন।
এই মৃত্যুর পেছনে বিদ্যমান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, নিরাপত্তাবিধি অমান্য করা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণের নগণ্যতা। শ্রম আইন, ২০০৬ এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০২০ এর মত শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও, এগুলির কার্যকর বাস্তবায়নে বাধা রয়েছে। শ্রম আইনের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ সম্পর্কিত অধ্যায়গুলি কারখানার জন্য উপযোগী হলেও, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য যথেষ্ট নয়। ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর’ এর জনবলের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সহ কয়েকটি সংস্থা নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়ন করতে হাইকোর্টে রিট দাখিল করে। হাইকোর্ট বিভিন্ন নির্দেশনা দিলেও, তার কার্যকর বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য ‘বাংলাদেশ ইমারত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গঠনের বিধান থাকলেও, এখনও এই কর্তৃপক্ষ গঠন হয়নি।
নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শ্রম আইনের সংস্কার, ইমারত নির্মাণ বিধিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন, ইমারত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন, এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সাধ্য। তবে এখনও পর্যাপ্ত তথ্য উপলব্ধ না থাকায় আমরা পরে আপডেট প্রদান করবো।