নিম্ন জন্মহার: এক বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ
বিশ্বে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে, এবং অনেক দেশে জন্মহার কমে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই নিম্ন জন্মহার বিভিন্ন দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৬০০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন। কিন্তু পরবর্তী ২০০ বছরে এই সংখ্যা ৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৬১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের সাবেক চেয়ারম্যান মারিনার এস. একলস বিশ্বের জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হার সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতি: বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধীরগতিতে হলেও, কিছু দেশে জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাশিয়া, চীন এবং জাপান এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। গত বছর সারাবিশ্বে মাত্র প্রায় ৭০০,০০০ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অতিক্রম করবে। চীনের মোট জনসংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৬৫০ মিলিয়নের নিচে নেমে যেতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশেও প্রতি নারীর জন্মদানের হার ১ এর নিচে নেমে গেছে।
কারণ: জনসংখ্যা হ্রাসের বিভিন্ন কারণ আছে। নগরায়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, গর্ভনিরোধক ব্যবহার, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, সন্তান লালন-পালনের ব্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি। গ্রামীণ সমাজ থেকে শহুরে সমাজে পরিবর্তনও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আধুনিক শহুরে জীবনে বড় পরিবারের গুরুত্ব কমে গেছে।
প্রভাব: নিম্ন জন্মহারের ফলে শ্রমশক্তির অভাব, অর্থনৈতিক মন্দা, বয়স্কদের যত্নের বোঝা বৃদ্ধি, সামাজিক সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সমাধান: নিম্ন জন্মহারের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছেঃ প্রো-ন্যাটালিস্ট নীতি গ্রহণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, সন্তান লালন-পালনের ব্যয় কমানো, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ইত্যাদি। অভিবাসনও একটি সমাধান হতে পারে, তবে মূল্যবোধের পার্থক্যের ফলে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
উপসংহার: নিম্ন জন্মহার একটি বহুমুখী সমস্যা, যার সমাধানে সরকার, নীতিনির্ধারক ও সমাজকে একত্রে কাজ করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি হবে।