নগরায়ন (বা শহরায়ন) হলো গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে অঞ্চলে জনসংখ্যার স্থানান্তর, শহুরে অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সমাজের এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া। এটি শহর ও নগর গঠন এবং বৃদ্ধির প্রধান প্রক্রিয়া। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০০৮ সালের শেষের দিকে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক শহুরে এলাকায় বাস করবে। ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের প্রায় ৬৪% এবং উন্নত দেশের ৮৬% জনসংখ্যা নগরায়িত হবে।
নগরায়নের ইতিহাস: প্রাচীন সভ্যতায় ইন্দুস উপত্যকা, মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে প্রথম শহর গড়ে উঠেছিল। ১৮ শতকের পূর্বে, অধিকাংশ মানুষ গ্রামে কৃষিকাজে নিযুক্ত ছিল, শহরে ছোটোখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য হতো। ১৮ শতকে ব্রিটিশ কৃষিক্রান্তি এবং শিল্প বিপ্লবের ফলে শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়। শ্রমিকরা কৃষিকাজ ছেড়ে নতুন শিল্প শহরগুলিতে চাকরির সন্ধানে যেত। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার ফলে নগরায়ন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বের ৫০% জনসংখ্যা শহরে বাস করতে শুরু করে।
নগরায়নের কারণ: নগরায়নের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধান। শহরগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, বিভিন্ন সেবা এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধা আছে। গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষ শহরে আশ্রয় নেয়।
নগরায়নের প্রভাব: নগরায়ন অর্থনীতির বৃদ্ধিতে অবদান রাখে, কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাবও আছে। জনসংখ্যার অত্যধিক ঘনত্বের ফলে বাসস্থানের সংকট, পরিবেশ দূষণ, পানি সংকট, যানজট, অপরাধ বৃদ্ধি, এবং স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। নগর পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন এবং সুশাসন নগরায়নের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নগরায়ন জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, জীবনধারা পরিবর্তন করে, পরিবারের কাঠামোতে পরিবর্তন আনে, সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনে, অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে এবং পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে। নগরায়নের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে কাঠামোগত ঘাটতি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, অপরাধ বৃদ্ধি, সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত ঝুঁকি বৃদ্ধি।