টিউলিপ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tulipa): লিলিয়াসিয়ে পরিবারের অন্তর্গত এক প্রকার পুষ্পজাতীয় উদ্ভিদ। এটি পাত্রে চাষ, বাগান এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জমিতেও চাষ হয়। বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ দেখা যায়, প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং অগণিত সংকর প্রজাতি রয়েছে। বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত, এর উচ্চতা ৪ ইঞ্চি (১০ সে.মি.) থেকে ২৮ ইঞ্চি (৭১ সে.মি.) পর্যন্ত হতে পারে। বেশিরভাগ টিউলিপের ডাঁটা থেকে একটি মুকুল ফোটে, কিন্তু কিছু প্রজাতিতে একাধিক ফুল হতে পারে। এর ফুলের রঙ নীলাভ ব্যতীত অন্যান্য রঙের হতে পারে। ফল মোড়কে ঢাকা থাকে, দুই সারিতে বীজ থাকে। ডাঁটায় অল্প কিছু পাতা থাকে, বৃহৎ প্রজাতিতে অনেকগুলো পাতা থাকতে পারে। পাতাগুলো নীলাভ সবুজ রঙের।
ঐতিহাসিক দিক: অটোমান সাম্রাজ্যে টিউলিপের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হলেও, পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডে এর বাণিজ্যধর্মী আবাদ শুরু হয়। নেদারল্যান্ড বিশ্বের প্রধান টিউলিপ উৎপাদনকারী দেশ। বার্ষিক তিন বিলিয়নেরও অধিক টিউলিপ কন্দ উৎপাদন করে। ষোড়শ শতাব্দী থেকে টিউলিপের চাষ হয়ে আসছে। পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালার এলাকা থেকে উদ্ভূত হয়ে কাজাখস্তানে স্থানান্তরিত হয়। এরপর মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, ইউরোপের দক্ষিণাংশ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়ার আনাতোলিয়া থেকে ইরানের পূর্বাংশ, চীনের উত্তর-পূর্বাংশ এবং জাপানে এ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। ইরান ও তুরস্কে ফার্সি ভাষায় লালে নামে ডাকা হয়।
ব্যবহার ও প্রতীকবাদ: টিউলিপ উৎপাদন দুটি প্রধান কারণে করা হয় - (ক) ফুল উৎপাদন এবং (খ) কন্দ উৎপাদন। উদ্যান, বাগান, গৃহে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর বিনিময় মূল্য প্রায় এগার হাজার মিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে। পারস্যে লাল টিউলিপকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করা হয়। লাল টিউলিপের কালো অংশের মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়া এবং হলুদ টিউলিপ বিনিময় করাকে আশাহীনতা তুলে ধরা হতো। নেদারল্যান্ডসে টিউলিপের চাষাবাদ প্রণালীকে ডাচ টিউলিপ বলা হয়। টিউলিপকে কেন্দ্র করে শিল্প গড়ে উঠেছে এবং টিউলিপ উৎসব পালন করা হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: নেদারল্যান্ড বিশ্বের প্রধান টিউলিপ উৎপাদনকারী দেশ। এর অর্থনীতিতে টিউলিপ উৎপাদন ও রপ্তানী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।