জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি): বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে, দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করে। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যার কার্যক্রম দেশের সকল সরকারি ও অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
এনসিটিবির উৎপত্তি ১৯৫৪ সালে 'পূর্ববঙ্গ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড'-এর মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর 'বাংলাদেশ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড' নামে পুনর্গঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন কমিটি' এবং ১৯৮১ সালে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন কেন্দ্র' (NCDB) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে NCDB এবং বাংলাদেশ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড একীভূত হয়ে বর্তমান 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড' গঠিত হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন ২০১৮' পাশ হয়।
কাজ ও দায়িত্ব:
এনসিটিবির প্রধান কাজ হলো:
- প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি উন্নয়ন ও পরিমার্জন।
- পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক নির্দেশিকা, পাঠসহায়ক বই প্রণয়ন।
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাক্রম বিস্তার।
- পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বিতরণ ও বাজারজাতকরণ।
- নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ (২০১০ সাল থেকে)।
প্রশাসনিক কাঠামো:
এনসিটিবির প্রধান নির্বাহী হলেন চেয়ারম্যান। এছাড়াও, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, অর্থ ও প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক সদস্যরা রয়েছেন।
স্থান:
এনসিটিবির প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় 'পুস্তক ভবন'-এ অবস্থিত। এছাড়াও, তেজগাঁওয়ে বই ও কাগজের গুদাম এবং জয়দেবপুরে একটি প্রিন্টিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি:
অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান (চেয়ারম্যান), অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী (পাঠ্যপুস্তক), অধ্যাপক রবিউল করিম চৌধুরী (শিক্ষাক্রম), অধ্যাপক এ এফ এম সরোয়ার জাহান (প্রাথমিক শিক্ষা), জনাব শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস (সচিব) ।
উপসংহার:
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কার্যক্রম দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে অবদান রাখছে। এনসিটিবির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের উপর দেশের শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভরশীল।