জরুরী অবস্থা: একটি বিশ্লেষণ
জরুরী অবস্থা হলো এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে একটি সরকার তার নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য সাধারণ সময়ে প্রযোজ্য নীতিমালা থেকে বাইরে গিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নাগরিক অশান্তি, যুদ্ধ, মহামারী, বা অন্যান্য জৈব নিরাপত্তা ঝুঁকির সময় সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, জরুরি অবস্থার তীব্রতা ও সরকারের নীতি অনুযায়ী, নাগরিকদের অধিকার ও চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত হতে পারে।
জরুরি অবস্থা অনেক সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে, যার ফলে শাসনব্যবস্থা একনায়কতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটতে পারে। কিছু জরুরি অবস্থায় সামরিক আইন জারি করা হয়, যেখানে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জরুরি অবস্থার বাইরেও বিভিন্ন সরকারী আইন এই ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চুক্তি (ICCPR) অনুচ্ছেদ ৪ অনুসারে, জরুরি অবস্থায় কিছু অধিকার সীমিত করা যায়, কিন্তু চুক্তির মৌলিক বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে হবে। যে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করতে হবে।
রাজনৈতিক তত্ত্ববিদ কার্ল স্মিট যুক্তি দিয়েছেন যে জরুরী অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের একান্ত অধিকার। তবে, জর্জিও আগামবেন এই ধারণার সমালোচনা করেছেন, তিনি মনে করেন জরুরি অবস্থার প্রক্রিয়া নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেয়।
অনেক গণতান্ত্রিক দেশে জরুরি অবস্থার আইনি সংজ্ঞা রয়েছে। সাধারণত, রাষ্ট্রে ব্যাপক হুমকি থাকলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। জরুরি অবস্থার ধরন ও তীব্রতা বিভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় জরুরি অবস্থার অপব্যবহার হয়, যেমন রাষ্ট্রবিরোধী মতকে দমন করা। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯১ সালের আগস্টে সোভিয়েত ইউনিয়নে অভ্যুত্থানের চেষ্টা, যেখানে অভ্যুত্থানকারীরা জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়।
আন্তর্জাতিক চুক্তি, যেমন ICCPR, মানবাধিকার সংক্রান্ত আমেরিকান ও ইউরোপীয় কনভেনশন, আন্তর্জাতিক শ্রম কনভেনশন, জরুরি অবস্থার অপব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে।
ভারতের সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভারতে দুইবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল।