বাংলাদেশের জমি জরিপের ইতিহাস বহু দীর্ঘ। প্রাচীন মিশরে নীলনদের বন্যায় জমির সীমানা নির্ণয়ের প্রয়োজন থেকেই জমি জরিপের ধারণা উদ্ভব হয়। এই উপমহাদেশে, শেরশাহ সুরি প্রথম জরিপ প্রথা চালু করেন। মোঘল আমলে টোডরমল এই কাজে অবদান রাখেন, যদিও এটি plot-to-plot জরিপ ছিল না।
ব্রিটিশ আমলে জরিপের ধারণা আরও বৈজ্ঞানিক রূপ পায়। ১৭৭৪ সালে জেমস রেনাল ঢাকার আশেপাশের মানচিত্র তৈরি করেন। ১৮০২ সালে উইলিয়াম ল্যাম্বটন ভারতে ত্রিগনোমেট্রিক্যাল জরিপের সূচনা করেন, যা সঠিক নকশা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
জমিদারী প্রথার সময়, জমিদারী সীমানা নির্ণয়ের জন্য ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত থাকবাস্ত জরিপ চালু ছিল। রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৮৪৭ থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত রাজস্ব জরিপ পরিচালিত হয়। কর্ণেল মিঃ স্মিত এর নেতৃত্বে এই জরিপকে প্রথম বৈজ্ঞানিক জরিপ বলে মনে করা হয়। অস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং জমিদারী সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য খসড়া জরিপ ও করা হতো।
১৯৬৩ সালে নদী ভাঙ্গনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপ করার জন্য একটি স্থায়ী দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন করা হয়। ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশের পর, ১৮৮৮ সালে ভূমি রেকর্ড দপ্তর গঠিত হয়। কক্সবাজারের রামু থেকে শুরু হয়ে ১৯৪০ সালে দিনাজপুর পর্যন্ত ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সি.এস. জরিপ) সম্পন্ন হয়। ৫০ বছর পর, জমির মালিকানার পরিবর্তনজনিত কারণে, বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জে সংশোধনী জরিপ (১৯৫২ সালে সম্পন্ন) করা হয়।
১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা বিলোপের পর, জমিদারদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ ও প্রজাদের নামে খতিয়ান প্রণয়নের জন্য ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এস.এ. জরিপ করা হয়। এ জরিপে ভুল থাকায় আরও একটি সংশোধনী জরিপ (আর.এস. জরিপ) শুরু হয় (১৯৬৫-৬৬) যা বর্তমানেও কিছু এলাকায় চলছে। ঢাকা মহানগরীতে একটি বিশেষ জরিপও সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি, ডিজিটাল জরিপ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জিওডেটিক কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা ও মৌজাভিত্তিক ভূমির নকশা ও প্লট ভিত্তিক মালিকানা রেকর্ড প্রণয়ন করা হচ্ছে (২০১৩ থেকে)। এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ করার কাজে GNSS/ ETS/ Drone ব্যবহার করা হচ্ছে।