বাংলাদেশে ডিজিটাল জরিপ: একটি নতুন যুগের সূচনা
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল জরিপের আগমন ঘটেছে একটি নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঐতিহ্যগত জরিপ পদ্ধতির জটিলতা ও সময়সাধ্যতার পরিবর্তে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূমি জরিপের কাজ দ্রুততর ও স্বচ্ছতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ডিজিটাল জরিপ, যা 'বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে' (বিডিএস) নামেও পরিচিত, দেশের নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদী হয়রানি ও অর্থব্যয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কীভাবে হচ্ছে ডিজিটাল জরিপ?
ডিজিটাল জরিপে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস), ইলেকট্রনিক টোটাল স্টেশন (ইটিএস), ড্রোন (ইউএভি), স্যাটেলাইট ইমেজিং এবং ডিজিটাল ম্যাপিং সফ্টওয়্যার। এই প্রযুক্তিগুলোর সাহায্যে জমির অবস্থান, আকার, সীমানা নির্ণয় করা হয় অত্যন্ত নির্ভুলভাবে। একই সাথে জমির মালিকানা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে।
পুরনো জরিপের অবস্থা:
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বক্তব্য অনুযায়ী, ডিজিটাল জরিপ শুরু হওয়ার পর চলমান জরিপগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, আগেকার সময়ে সম্পন্ন হওয়া জরিপগুলো অব্যাহত থাকবে। ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হওয়ার পর, নতুন জরিপের তথ্যই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
পাইলট প্রকল্প ও বাস্তবায়ন:
পটুয়াখালী ও বরগুনাতে ডিজিটাল জরিপের পাইলট প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ধামরাইতেও এই জরিপের কাজ চলমান রয়েছে। এই পাইলট প্রকল্প সফল হলে, সারা দেশে ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা:
সারা দেশে ডিজিটাল জরিপের সক্ষমতা অর্জনে ১ হাজার তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৪৭০টি উপজেলার মৌজা পর্যায়ে জিওডেটিক সার্ভের মাধ্যমে জিও-রেফারেন্সিং পয়েন্ট নির্ধারণ এবং মৌজা ম্যাপের ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হবে।
ডিজিটাল জরিপের সুবিধা:
ডিজিটাল জরিপের ফলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ও বিরোধ কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। জমির মালিকানা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা ও হয়রানি কমবে। জমির পরিমাপ ও রেকর্ড আরও নির্ভুল ও স্বচ্ছ হবে। এছাড়াও, ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও কার্যকর হবে। ভূমি কর আদায় ও রাজস্ব বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করবে।
জমির মালিকদের জন্য নির্দেশনা:
ডিজিটাল জরিপের সময়, জমির মালিকদের তাদের জমির দলিলপত্র, খতিয়ান এবং খাজনা পরিশোধের রশিদ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। জরিপ কর্মকর্তাদের সকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। জমির সীমানা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে রাখতে হবে।
উপসংহার:
ডিজিটাল জরিপ বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহায়তা পাওয়া যাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকার, জরিপ কর্মকর্তা এবং জনসাধারণ সকলের সহযোগিতা অপরিহার্য।