চৌমুহনী: নোয়াখালীর বাণিজ্যিক হাব
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হল চৌমুহনী। নামকরণের পেছনে আছে ছাতারপাইয়া, আটিয়াবাড়ি, চন্দ্রগঞ্জ ও ফেনী খালের চার মোহনার সংযোগস্থল। এই চার মোহনা মিলিত হওয়ার স্থানকে কেন্দ্র করেই এর নামকরণ হয় ‘চৌমুহনী’।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
পূর্বে চৌমুহনী দেশীয় ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। নৌ-যোগাযোগের মাধ্যমে চাঁদপুর, ভৈরব, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সাথে এর যোগাযোগ ছিল। ৬টি নৌকাঘাটের মাধ্যমে বড় বড় সাম্পান ও ডিঙ্গি নৌকায় মালপত্র আনা-নেওয়া হতো। রেল যোগাযোগও ছিল অত্যন্ত উন্নত। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের (বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) মধ্যে বাণিজ্যিক দিক থেকে চৌমুহনী রেলস্টেশন প্রথম স্থান অধিকার করেছিল।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
চৌমুহনীতে ৭৪টি শিল্পকারখানা নিয়ে বিসিক শিল্প নগরী, ২২টি বড় আটা কল, শতাধিক ক্ষুদ্র শিল্প, ডেল্টা জুট মিল লিঃ এবং প্রায় ১০,০০০ দোকানপাট রয়েছে। ১৯৪৯ সালে উপেন্দ্র কুমার সাহা ‘শ্রী গোপাল অয়েল মিল’ (লাড্ডু গোপাল) স্থাপন করেন, যার পর চৌমুহনীতে ৩২টি তেলের মিল স্থাপিত হয় এবং তেল পশ্চিম পাকিস্তানেও রপ্তানি হতো। বর্তমানে কিছু কিছু তেলের মিল চালু আছে। চৌমুহনীতে প্রায় একশ’ অফসেট প্রেসও রয়েছে। বইয়ের বাজার, সরিষার তেল কারখানা, মুড়ি কারখানা, রাইস মিল, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসহ বহু বড় ও মাঝারি শিল্প কল কারখানা আছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
চৌমুহনীতে ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চৌমুহনী সরকারি এস.এ কলেজ (১৯৮৬ সালে সরকারি হয়) সহ অনেক বেসরকারি স্কুল ও কলেজ রয়েছে। ১৯৩৯ সালে চৌমুহনী ইসলামিয়া লাইব্রেরি ধর্মীয় প্রকাশনায় হাত দেয়। ১৯৪৫ সালে মৃত চিত্ত রঞ্জন সাহা বাসন্তি প্রেস প্রতিষ্ঠা করে পরে পুঁথিঘর থেকে প্রকাশনা শুরু করেন।
যোগাযোগ:
চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশন ঢাকা-নোয়াখালী গামী ট্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী, ফেনী-নোয়াখালী ও চৌমুহনী-মাইজদি সড়ক এখানে মিলিত হয়েছে, যা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চৌমুহনীর জনসংখ্যা ছিল ৮০,০০১ জন। ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য পাওয়া যায়নি। চৌমুহনী পৌরসভার আয়তন ২০.৭০ বর্গ কিলোমিটার। বেগমগঞ্জ উপজেলার মধ্যাংশে অবস্থিত এ পৌরসভার উত্তর-পশ্চিমে মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়ন, উত্তরে নরোত্তমপুর ইউনিয়ন, উত্তর-পূর্বে দুর্গাপুর ইউনিয়ন, পূর্বে হাজীপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণে শরীফপুর ইউনিয়ন ও একলাশপুর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পশ্চিমে বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন অবস্থিত। চৌমুহনী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে।