সড়ক: বাংলাদেশের অবকাঠামো ও যোগাযোগের অপরিহার্য অঙ্গ
বাংলাদেশের ইতিহাসে সড়ক পরিবহণের উন্নয়ন এক দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। অতীতে নদীপথের প্রাধান্য থাকলেও, বর্তমানে সড়ক পরিবহণ দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মেরুদণ্ড। প্রাচীনকাল থেকেই ঢাকা থেকে সংগ্রামগড় (নোয়াখালী) পর্যন্ত উঁচু বাঁধের উপর নির্মিত রাস্তা, বাগদ্বার থেকে কুচবিহার পর্যন্ত সড়ক এবং রাঙ্গামাটি-কুচবিহার সড়ক বাংলাদেশের প্রাচীন সড়ক ব্যবস্থার প্রমাণ বহন করে। জেমস রেনেলের ভূ-জরিপে কলকাতার সাথে বাইরের অঞ্চল সংযুক্ত ৬টি উল্লেখযোগ্য স্থলপথের উল্লেখ পাওয়া যায়, যার দুটি বাংলাদেশের ভূখন্ড জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
ব্রিটিশ আমলে সামরিক ও ডাকযোগাযোগের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ করা হয়, যার মধ্যে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড উল্লেখযোগ্য। ১৮২২ ও ১৮৩৩ সালের বিধি অনুসারে সড়ক তহবিল গঠনের জন্য কর ধার্য করা হতো। ১৮৬৭-৬৮ সালে সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৮৭০-৭১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে পূর্ব ভারতের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উল্লেখ রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি বাংলাদেশের যোগাযোগ উন্নয়নে অবদান রাখে: দার্জিলিং ট্রাঙ্ক রোড, যশোর রোড এবং চিটাগাং ট্রাঙ্ক রোড।
১৯০০ সালে বাংলায় সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৯৬০০০ মাইল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সড়ক উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হলেও, ১৯৩৪ সালে মি. এ.জে কিং এর নেতৃত্বে একটি সড়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র ৪৮০ কিলোমিটার উন্নতমানের পাকা সড়ক ছিল। স্বাধীনতার পর সড়ক, সেতু ও কালভার্ট পুনর্নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে সড়ক পরিবহণ খাতের উন্নয়ন ব্যাপকভাবে অগ্রসর হয়। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপর। নগর উন্নয়ন সংস্থা, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার সংস্থা ইত্যাদি স্থানীয় সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। বিআরটিএ মোটরযানের লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান করে, আর বিআরটিসি রাষ্ট্রায়ত্ত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন পরিষেবা প্রদান করে।
২০০১ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত সড়ক নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ছিল ২০,৮৫৪ কিলোমিটার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্কের মান উন্নত হলেও, নিম্নমানের নির্মাণ, জলাবদ্ধতা এবং বন্যার কারণে এর অবনতি ঘটে। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানজটও বেড়েছে। সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বৃহৎ বাজেট বরাদ্দ করা হয় এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।