বাংলাদেশের বিভিন্ন চেম্বারের নির্বাচন: একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে অসংখ্য বাণিজ্যিক সংগঠন রয়েছে, যাদের মধ্যে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এই চেম্বারগুলি বিভিন্ন জেলা ও শহরে অবস্থিত এবং তাদের নিজ নিজ এলাকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন চেম্বারের সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবো, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট চেম্বারের নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রেখে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার: ২৯ বছর পর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী। শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। নির্বাচন বোর্ডে প্রবীর কুমার সাহা (চেয়ারম্যান), মাহমুদ হোসেন, স্বপন চৌধুরী এবং নির্বাচন আপীল বোর্ডে ফজলুল হক রুমন রেজা (চেয়ারম্যান), মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম এবং অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন রয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া চাঁদা, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স ও আয়কর প্রত্যয়নপত্র জমা দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার: চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। একটি প্যানেলে চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ এবং অপরটিতে হারুন অর রশীদ, আনোয়ার হোসেন ও তরিকুল আলম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভোটগ্রহণ শহরের পুরাতন বাজারের চেম্বার ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাব কম থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোলাইমান বিশু নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আব্দুল ওয়াহেদের নেতৃত্বাধীন প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়।
নরসিংদী চেম্বার: নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনে রাশেদুল হাসান রিন্টুর নেতৃত্বাধীন প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। সাধারণ শ্রেণীতে ১২ জন ও সহযোগী শ্রেণীতে ৬ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ ভূইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার: চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ পদত্যাগের পর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আনোয়ার পাশাকে প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করার দায়িত্ব পেয়েছেন।
সিলেট চেম্বার: সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি উঠেছে। ২০২৪ সালের ২০ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাহমিন আহমদ সভাপতি, মো. এমদাদ হোসেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং এহতেশামুল হক চৌধুরী সহসভাপতি মনোনীত হন। কিন্তু একটি অংশের দাবি, এই কমিটি সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, ৫ জন পরিচালক পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মুজিবুর রহমান মিন্টু দায়িত্ব পালন করছেন।
যশোর চেম্বার: যশোর চেম্বর অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে মিজানুর রহমান খান সভাপতি ও তানভিরুল ইসলাম সোহান সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যান্য পদের বিজয়ীদের ঘোষণা করেন যশোরের সহকারী কমিশনার ও নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন।
এই নির্বাচনগুলি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের রাজনীতি ও গতিপ্রকৃতির উপর আলোকপাত করে। প্রতিযোগিতা, সমঝোতা, এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ভূমিকা স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। এসব নির্বাচনের ফলাফল এলাকার অর্থনীতি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশকে প্রভাবিত করে।