চিনির আমদানি

আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:২০ এএম

বাংলাদেশে চিনির আমদানি একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের চিনির চাহিদা মেটাতে বার্ষিক বিপুল পরিমাণ চিনি আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি চিনির আমদানি শুল্ক-কর কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৮ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির উপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০% থেকে কমিয়ে ১৫% করা হয়। পরবর্তীতে ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্কে আরও ছাড় দেওয়া হয়, প্রতি টন আমদানি শুল্ক ৬০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৫০০ টাকা করা হয়। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল দেশের বাজারে চিনির সরবরাহ বৃদ্ধি করা এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু শুল্ক কমানোর পরও বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩০-১৩৫ টাকায় পৌঁছেছে। পাইকারি বিক্রেতারা জানান, চিনির সরবরাহ কম থাকার কারণেই দাম বেড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই চিনির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। চিনির জন্য উৎপাদকদের (মিল পর্যায়ে) কাছে তারা ক্রয়াদেশ দিলে সেই চিনি আসতে সময় লাগছে ৮-১০ দিন। এছাড়াও, মিলগেটে আগে কেনা চিনির জন্য বেশি দাম দিতে হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি বিক্রেতা মিজানুর রহমান জানান, তিনি রাজধানীর মৌলভীবাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় এক বস্তা চিনি কিনেছেন এবং ৬২৫০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ছেড়েছেন। তবে, খুচরা বিক্রেতারা জানান, তাদেরকে আরও বেশি দামে চিনি কিনতে হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১২৮-১৩৫ টাকায়। চিনি উৎপাদকেরা জানান আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে চিনির দাম বেড়েছে। চিনি আমদানিতে উচ্চ হারে নানা ধরনের শুল্ক-কর আরোপ ছিল, যার ফলে দেশের বাজারে চিনির দাম প্রতিবেশী দেশের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে দেশে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার টন। এছাড়া, দেশে বিক্রি হওয়া চিনির একটি বড় অংশ আসে প্রতিবেশী ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে। এই চোরাচালানের কারণে দেশীয় চিনিশিল্প অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে। বর্তমানে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে তিন হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। পরিশোধিত চিনি আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের হার অপরিশোধিত চিনির ওপর থাকা শুল্কের দ্বিগুণ রাখা হয়েছিল। গত পাঁচ বছরের গড় আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবছর গড়ে ১৯ দশমিক ৬৯ লাখ টন করে চিনি আমদানি হয়েছে। বেসরকারি খাতের কয়েকটি কোম্পানি অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে এবং পরিশোধনের পর তা বাজারে সরবরাহ করে। সরকার পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বাড়ে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, যারা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেন, তারা চান পরিশোধিত চিনি কম আমদানি হোক। কিন্তু বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে পরিশোধিত চিনির আমদানি বৃদ্ধি দরকার। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি গত পাঁচ বছরের গড় আমদানির তুলনায় প্রায় ৪ দশমিক ৫৭ লাখ টন কম হয়েছে। ভারতের স্থানীয় বাজারে ৪৫-৫০ টাকায় প্রতি কেজি চিনি পাওয়া যায়, কিন্তু উচ্চ শুল্ক হার থাকায় বাংলাদেশে এই চিনি ভারতের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হয়। মূল্যের এই পার্থক্যের কারণে চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। ভারত থেকে অবৈধ চিনির চালান রোধ করতে আমদানি শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।

মূল তথ্যাবলী:

  • এনবিআর চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়েছে
  • শুল্ক কমানোর পরও চিনির দাম বেড়েছে
  • চিনির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে
  • ভারত থেকে চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে
  • চিনির বাজার গুটিকয়েক কোম্পানির উপর নির্ভরশীল

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - চিনির আমদানি

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চিনির আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে।