নেত্রকোনার মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন:
নেত্রকোনা জেলার দশটি উপজেলায় একসময় নদী, নদী, খাল-বিল ও হাওর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশীয় মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং অনেক প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে দেশীয় মাছের দাম বেড়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এই পরিস্থিতি মৎস্যজীবীদের জন্য চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক মৎস্যজীবী এখন পেশা বদল করছে এবং কৃষিকাজ, পুকুরে চাষ করা মাছ বিক্রি ইত্যাদি কাজে যুক্ত হচ্ছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় মোট ৬৮ টি হাওর, ১৮৮ টি নদ-নদী ও খাল-বিল রয়েছে, যার মোট আয়তন ১,১৬,৩১৫ হেক্টর। জেলায় বার্ষিক ৫৬,০০০ মেট্রিক টন মাছের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন প্রায় ১,০৭,০০০ মেট্রিক টন। ৪৮,৩৮৪ জন নিবন্ধিত ও প্রায় ১২,০০০ অনিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছে যারা মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।
বর্ষাকালে মাছের প্রজনন হলেও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার, কীটনাশক ও গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহারের ফলে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক উন্মুক্ত জলাশয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকার ফলে জেলেদের মাছ ধরতে অসুবিধা হচ্ছে।
খালিয়াজুরি উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী ক্ষিতীন্দ্র বর্মণ বলেন, “আমাদের বাপ-দাদারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন, আমরাও করছি। কিন্তু এখন আগের মতো মাছ না পাওয়ায় জীবন চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তাই এখন উজান থেকে চাষ করা পাঙ্গাশ মাছ কিনে এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার অন্য ভাইরা পেশা বদল করে কৃষিকাজ করছে।”
অন্যান্য মৎস্যজীবী ও স্থানীয়রাও একই ধরণের অসুবিধার কথা জানান। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু বিপন্ন প্রজাতির মাছ কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং আরও কিছু প্রজাতি ফিরিয়ে আনার গবেষণা চলছে। পুকুরে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল উদ্ধার এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে ক্ষিতীন্দ্র বর্মণের ব্যক্তিগত তথ্য (বয়স, জাতিগত পরিচয়, সম্প্রদায় ইত্যাদি) উপস্থাপন করা হয়নি কারণ প্রদত্ত পাঠ্যে এসব তথ্য নেই। আমরা ভবিষ্যতে এই তথ্য আপডেট করব যখন আরো তথ্য উপলব্ধ হবে।