খালিয়াজুরী উপজেলা

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

খালিয়াজুরী উপজেলা: নেত্রকোণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা

খালিয়াজুরী উপজেলা বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ২৪°৩৬´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০০´ থেকে ৯০°১৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই উপজেলাটি উত্তরে মোহনগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা), দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা এবং পশ্চিমে মদন উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২৯৭.৬৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ২০২৩ সালে প্রায় ১,১২,৩২৮ জন মানুষ বাস করেন।

ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত:

ঐতিহাসিকদের মতে, খালিয়াজুরী একসময় কামরূপ রাজ্যের রাজধানী ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জিতারী নামের একজন সন্ন্যাসী এ অঞ্চল দখল করার পর কামরূপের শাসনচ্যুত হয়। পরবর্তীতে ঈশাখাঁ নামক একজন অধিপতির শাসনাধীন ছিল এ অঞ্চল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি হোমবংশীয়দের শাসনাধীন হয়ে পড়ে। ১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা বন্দোবস্তের সময় বেশ কয়েকজন জমিদার এ পরগনার মালিক ছিলেন। ১৯০৬ সালে খালিয়াজুরী থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন সরাসরি যুদ্ধ হয়নি, তবে উপজেলার ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা অন্য এলাকায় যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন।

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও অর্থনীতি:

খালিয়াজুরী উপজেলার প্রধান জলাশয় হল ধনু, পিয়াইন, সুরমা ও চিনাই নদী এবং বিভিন্ন বিল যেমন রাহুল বিল, রুসকি বিল, পাগলা বিল, কেউরিয়া বিল ও ধ্বরাজ বিল। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, যা ৮০.৫৯%। ধান এখানকার প্রধান ফসল। মাছ চাষ ও মৎস্যজীবীদের মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য আয় হয়। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য। এ উপজেলার সব ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ সীমিত।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক:

খালিয়াজুরী উপজেলার শিক্ষার হার ৩০.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শালদিঘা জিজি উচ্চ বিদ্যালয়, খালিয়াজুরী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইব্রেরি, ক্লাব, মহিলা সমিতি এবং খেলার মাঠ রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে ৪০টি মসজিদ, ১৭টি মন্দির এবং ৫টি মাযার রয়েছে। 'ধনু' নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা (অবলুপ্ত) এখান থেকে প্রকাশিত হত। শ্রাবণ মাসের শেষে নৌকা বাইচ নামক বার্ষিক বিনোদন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ:

১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে বন্যায় এ উপজেলায় গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।

প্রশাসন:

এই উপজেলার অধীনে ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পল্লী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ডিসপেনসারি এবং হাসপাতালের মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পানীয়জলের প্রধান উৎস নলকূপ, তবে অনেক নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত নয়। বিভিন্ন এনজিও যেমন প্রশিকা, খালিয়াজুরী ফাউন্ডেশন, কনসার্ন বাংলাদেশ, খালিয়াজুরী পল্লী উন্নয়ন ফেডারেশন এখানে কাজ করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • খালিয়াজুরী উপজেলা নেত্রকোণা জেলার অন্তর্গত।
  • এটির আয়তন ২৯৭.৬৩ বর্গ কিলোমিটার।
  • ধান এখানকার প্রধান কৃষি ফসল।
  • মুক্তিযুদ্ধে এখানে সরাসরি যুদ্ধ হয়নি।
  • শিক্ষার হার ৩০.৪%।
  • এখানে বিভিন্ন কুটিরশিল্পের প্রচলন রয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - খালিয়াজুরী উপজেলা

২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ৬:০০ এএম

বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনা ঘটে।