ক্রিসেন্ট গ্রুপ: ঋণ কেলেঙ্কারি ও পতনের গল্প
একসময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেওয়া ক্রিসেন্ট গ্রুপ আজ অস্তিত্বহীন। চামড়াজাত পাদুকা পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে নাম কামাই করা এই প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার কর্মী ছিলেন, কিন্তু আজ তারা বেকার। ক্রিসেন্ট গ্রুপের পতনের পেছনে রয়েছে জনতা ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারী, যার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিও গুরুতর আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে।
ক্রিসেন্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান:
ক্রিসেন্ট গ্রুপের অধীনে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যারস, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ এবং লেক্সকো লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানগুলি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রপ্তানি করত।
ঋণ কেলেঙ্কারি ও টাকা পাচারের অভিযোগ:
জনতা ব্যাংক থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছিল। এই ঋণের বেশিরভাগই খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়াও, প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালে ক্রিসেন্ট লেদারের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ মোট ৯১৯.৫৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। এই অবৈধ কাজে জড়িত থাকার জন্য এম এ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগমসহ জনতা ব্যাংকের ১৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের অবস্থা:
ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণের কারণে জনতা ব্যাংক গুরুতর আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
এম এ কাদেরের অবস্থা:
এম এ কাদের জেল থেকে জামিনে মুক্ত হলেও তার কোনো স্পষ্ট হদিস পাওয়া যায়নি। তার ছোট ভাই ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
উল্লেখযোগ্য তথ্য:
- ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিক্রয়কেন্দ্র এবং কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
- জনতা ব্যাংক ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ আদায়ে ব্যর্থ।
- প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের অভিযোগ।
- ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ।
- এম এ কাদেরের গ্রেফতার এবং জামিন।