টাকা পাচার

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৪:৪৩ এএম

বাংলাদেশে টাকা পাচার: একটি বাস্তবতা

বাংলাদেশে টাকা পাচার একটি বহুল আলোচিত ও উদ্বেগের বিষয়। বিভিন্ন সূত্র ও গবেষণা থেকে জানা যায় যে, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন অবৈধ পথে বিদেশে পাচার হচ্ছে। এই অর্থ পাচারের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম, কর ফাঁকি, রাজনৈতিক প্রভাব, এবং সুশাসনের অভাব। এই প্রবন্ধে আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য ও গবেষণার ভিত্তিতে বাংলাদেশে টাকা পাচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের উদাহরণ: লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের ক্ষেত্রে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আয়ের কোনো স্পষ্ট উৎস দেখাতে পারেননি। তার ব্যাংকের আমানত এবং বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার থাকলেও, তাঁর উল্লেখিত দুটি প্রতিষ্ঠান “ফোর পয়েন্ট জেনারেল ট্রেডিং” ও “ফোর পয়েন্ট হাউজিং”-এর কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, অন্তত ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্বাচন পরিচালনার তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনা টাকা পাচারের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

কালো টাকার গন্তব্য: কালো টাকার গন্তব্য মূলত অন্যান্য দেশ। সুইস ব্যাংকে জমা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্যান্য ‘ট্যাক্স হেভেন’ দেশে কোম্পানি গঠন বা সম্পত্তি কেনা হয়। আলোচিত সিকদার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, আবুধাবি ও সিঙ্গাপুরে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা কালো টাকা পাচারের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পাচারের পরিমাণ ও উৎস: বিশ্বব্যাপী ও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে টাকা পাচার নিয়ে গবেষণা হয়েছে। গবেষণাগুলোতে বিভিন্ন সংখ্যা উঠে এলেও, সকল তথ্য নির্ভরযোগ্য নয়। তবে, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি (জিএফআই) এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই অর্থের উৎসের মধ্যে রয়েছে হুন্ডি, বাণিজ্য কারসাজি, দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, এবং ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারী।

সরকারী উদ্যোগ: স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার জন্য অনেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুব কম পরিমাণ টাকা সাদা হয়েছে। সুইস ব্যাংকের তথ্য চাওয়া, আন্তর্জাতিক চুক্তি, এগমন্ট গ্রুপের সদস্যপদ ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, টাকা পাচার ঠেকাতে দৃশ্যমান সাফল্য অর্জিত হয়নি। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইস ব্যাংক থেকে তথ্য চাওয়ার ঘোষণা উল্লেখযোগ্য।

শ্বেতপত্র প্রতিবেদন: ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে দীর্ঘ সময়ে বিদেশে পাচারকৃত বিপুল অর্থের তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক খাতের কেলেঙ্কারী, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, এবং বিভিন্ন অবৈধ পথে অর্থ পাচারের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

উপসংহার: বাংলাদেশে টাকা পাচার একটি জটিল সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। আমরা আশা করি, এই সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আরও তথ্য উপলব্ধ হলে আমরা এই প্রবন্ধ আপডেট করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের অবৈধ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে।
  • কালো টাকার গন্তব্য মূলত অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ট্যাক্স হেভেন দেশ।
  • হুন্ডি, বাণিজ্য কারসাজি, দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, এবং ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারী টাকা পাচারের প্রধান উৎস।
  • সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও টাকা পাচার ঠেকাতে দৃশ্যমান সাফল্য অর্জিত হয়নি।
  • ২০২৩ সালের শ্বেতপত্রে দীর্ঘ সময়ে বিদেশে পাচারকৃত বিপুল অর্থের তথ্য উঠে এসেছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - টাকা পাচার

জানুয়ারী ৫, ২০২৫

অর্থ পাচারের বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করছে।