বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর হলেও কৃষি শ্রমিকদের অবস্থা দিন দিন করুণ হয়ে উঠছে। একদিকে ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি বেড়ে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী অন্তত ৭০০ টাকা, যা এক মণ ধানের দামের চেয়েও বেশি। এই পরিস্থিতির জন্য কৃষকরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। অনেকেই ধান চাষ করতে ছাড়ছে। তারা জীবিকার জন্য অন্য পেশা অনুসন্ধান করতে বাধ্য হচ্ছে।
ধানের দাম কম হলেও খুচরা বাজারে চালের দামের কোন কমতি নেই। চাতাল মালিকরা লোকসানের কথা বলছে। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ধান ক্রয় করছে না, কারণ ধানের দাম প্রায়শই ওঠানামা করে। কৃষকরা ধান বিক্রি করে লাভের আশা করে না। শুধুমাত্র ভাতের জোগান হলেই তাদের চলে যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও ফরিদপুরের মতো জেলাগুলিতে এই সংকট বেশি দেখা যাচ্ছে। আশুতোষ কুমার মজুমদার এরকম একজন কৃষক যিনি ধান চাষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাজেদা বেগমের মতো অনেক কৃষক ভূমিহীন, তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে। তালিম শেখের মতো কৃষকরা এক বিঘা জমি চাষ করে লোকসানে পড়ছে।
কৃষি শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য নীতিগত সংস্কার অপরিহার্য। নারী কৃষি শ্রমিকদের মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা এবং সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম এবং পরিবহন সংকট মোকাবিলা করতে হবে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে শ্রমিক সংকট এবং মজুরি বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা যাবে। সরকারকে এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়াও, কৃষি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যাবে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের দুর্ভাবনা ও মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য।