সোনাইমুড়ি: নোয়াখালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত সোনাইমুড়ি উপজেলা, ২০০৫ সালের ২৯ জানুয়ারী বেগমগঞ্জ উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়। ১৬৯.১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৩°০২´ থেকে ২৩°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০০´ থেকে ৯১°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বেগমগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সেনবাগ উপজেলা এবং পশ্চিমে চাটখিল উপজেলা সোনাইমুড়ির সীমান্তবর্তী।
জনসংখ্যা ও সম্প্রদায়: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সোনাইমুড়ির জনসংখ্যা ৩২৭১৯৪; পুরুষ ১৪৯৭৫১ এবং মহিলা ১৭৭৪৪৩। মুসলিম ৩১৭৭৭৭, হিন্দু ৯২২৭, বৌদ্ধ ১৮৪, খ্রিস্টান ১ এবং অন্যান্য ৫।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনীতি: ডাকাতিয়া নদী ও রহমত খাল সোনাইমুড়ির উল্লেখযোগ্য জলাশয়। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (২৭.৩২%), অকৃষি শ্রমিক (২.০৬%), শিল্প (০.৬৩%), ব্যবসা (১৬.৪৬%), পরিবহন ও যোগাযোগ (৩.৬০%), চাকরি (১৮.১৫%), নির্মাণ (১.২৯%), ধর্মীয় সেবা (০.৩৮%), রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স (১৪.৩৮%) এবং অন্যান্য (১৫.৭৩%)। ধান, সুপারি, সরিষা, ডাল, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। চালকল, বরফকল, করাতকল, বিস্কুট কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা ইত্যাদি শিল্প ও কলকারখানা এখানে বিদ্যমান। সোনাইমুড়ি হাট, থানার হাট, কামারের হাট, নদনা হাট, কাশিপুর হাট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হাটবাজার।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: সোনাইমুড়ির গড় সাক্ষরতার হার ৬১.০%; পুরুষ ৬০.২% এবং মহিলা ৬১.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সোনাইমুড়ি ডিগ্রী কলেজ (১৯৭০), সোনাইমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বজরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), সোনাইমুড়ি হামিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা (১৯২৬)। স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে ১টি হাসপাতাল, ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৮টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি: সোনাইমুড়িতে বজরা শাহী জামে মসজিদ (১১৫৩ হিজরী) এবং শ্রী শ্রী গধাদর কুন্ড তীর্থস্থান উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শন।
মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সোনাইমুড়ি ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২১ এপ্রিল এবং ১১ মে সোনাইমুড়ি রেলস্টেশন ও বগাদিয়া এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ২০ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ ডিসেম্বর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
যোগাযোগ: সোনাইমুড়িতে ২২২.৩৫ কিমি পাকা রাস্তা, ৭.৭৫ কিমি আধাপাকা রাস্তা এবং ১২৯৩.৩১ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। ৭ কিমি রেলপথও বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, এই তথ্যগুলি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তথ্যের কিছু অংশে বিভিন্নতা থাকতে পারে। আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারী ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সূত্রের সাহায্য নেওয়া উচিৎ।