কলা: বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ফল
কলা একটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল যা উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো জন্মায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কলার উৎপত্তিস্থল বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশে কলা একটি প্রধান ফসল এবং নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় বনকলা, বাংলাকলা, মামা কলা ইত্যাদি বুনোজাতের কলা চাষ হয়। ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলিতে কলা প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রাচীন ভারতেও কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ছিল।
কলার উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানী মালান ভারত ও চীনকে, অন্যদিকে হিল পাক-ভারত ও মালয়কে কলার উৎপত্তিস্থল বলে মনে করেন। কলাগাছ বীরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদ এবং একবীজপত্রী। মাটির নিচে রাইজোম বা কন্দ এবং মাটির ওপরে ছদ্মকাণ্ড নিয়ে গাছ গঠিত। কাঁচা কলা সবুজ, পেকে গেলে হলুদ হয়ে যায়। কলার পাতা সরল, পত্রভিত পুরু ও পত্রফলক প্রশস্ত।
কলা Musaceae পরিবারের এবং Musa গণের। এ পরিবারে প্রায় ৫০টি প্রজাতি রয়েছে। Musa গণের প্রায় ৪০টি প্রজাতি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় উৎপত্তি। বাংলাদেশে প্রায় ১৯টি জাতের কলা রয়েছে। কলার গাছ লম্বা ও খাটো—দুই প্রকার। পাকা অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী কলার ৪ প্রকার জাত রয়েছে।
কলা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ থাকে। পটাশিয়াম স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ায়, আয়রন শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।
কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়। চাষের পদ্ধতি, সার প্রয়োগ, রোগবালাই প্রতিরোধ, উৎপাদন বৃদ্ধি—এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশে ১,৩৮,৩৬০ একর জমিতে ৯,০৯,০৬০ মেট্রিক টন কলা উৎপাদিত হয়েছিল। বিশ্বে ২০২২ সালে উৎপাদন ছিল ১৭৯ মিলিয়ন টন। ভারত ও চীন দুটি দেশ মিলে উৎপাদনের ২৬% করে।
কলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি অনেক দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকা কলা থেকে মদ, বিয়ার, সিরকা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাকা কলার শুকনা গুঁড়া শিশুখাদ্য, চকলেট, বিস্কুট ও চিপ্স তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কলা গাছের ছোবড়ার ছাই পটাসিয়ামসমৃদ্ধ এবং সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
কলাগাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যেমন, পানামা উইল্ট, বানচি টপ, লিফ স্পট, ব্ল্যাক লিফ স্ট্রিক, ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট, অ্যানথ্রাকনোজ এবং ব্ল্যাক হেড। এসব রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও ঔষধ ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির কীটপতঙ্গও কলার ক্ষতি করে যেমন পাতা ও ফলের বিটল, কান্ডের উইভিল, কান্ডের মাজরাপোকা ইত্যাদি।
কলার চাষাবাদ, উৎপাদন, ব্যবহার ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে কলার উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।