কর সংস্কার

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৮ পিএম

বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বহুদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছে। জনগণের কাছ থেকে যথাযথভাবে কর আদায় এবং সেই অর্থ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করার লক্ষ্যে এই সংস্কার অপরিহার্য। প্রবন্ধটিতে কর সংস্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।

কর আহরণের চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক—এই তিনটি প্রধান উৎস থেকে রাজস্ব আহরিত হয়। আয়কর সরাসরি রাজস্ব, আর ভ্যাট ও শুল্ক পরোক্ষ রাজস্ব। কর আদায়ের পুরো প্রক্রিয়া জটিল ও ঝামেলার, যা করদাতাদের অনুৎসাহিত করে। দূরবর্তী অঞ্চলের করদাতাদের জন্য কর প্রদান আরও কঠিন। এছাড়াও, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির অভাব রাজস্ব আহরণে বড় প্রতিবন্ধকতা। এনবিআর-এর লোকবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: কর আহরণের প্রকৃতি এবং বাজেট প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা প্রয়োজন। ঔপনিবেশিক আইনের অসংগতি, বাজেট-পূর্ব আলোচনার অভাব, দাবি-দাওয়া পেশ করার সুযোগের অভাব, এসবই কর সংস্কারের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক আহরণের ক্ষেত্রে আন্তঃসমন্বয়ের অভাবও একটি বড় সমস্যা। ইউটিআইন (ইউনিফাইড ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) এর ধারণা বাস্তবায়িত হয়নি। নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী একই ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ হওয়ার ফলেও সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগে একসময় আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছিল।

কর ব্যবস্থার জটিলতা: অগ্রিম কর (এআইটি) ফাইনাল সেটেলমেন্ট হিসেবে কাটা হয়, যার ফলে পরবর্তীতে কোনো দাবি-দাওয়া করা যায় না। করপোরেট কর রিটার্ন গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর আরোপের বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য। এফডিআরের লাভের ওপর কর কাটা নিয়েও জটিলতা আছে। প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বিধান অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাতিল করা সম্ভব। কাস্টমস খাতে এইচএস কোডের ত্রুটিতে অতিরিক্ত জরিমানার বিধান সংস্কারের প্রয়োজন। কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টিও সংস্কারের আওতায় আনার প্রয়োজন।

পরোক্ষ করের নির্ভরতা ও বৈষম্য: বর্তমানে ৮০ শতাংশ কর আয় আসে পরোক্ষ কর থেকে, যা অর্থনীতির বৃদ্ধির পরিপন্থী এবং দরিদ্রদের উপর বেশি চাপ ফেলে। উৎসে ভ্যাট কর্তন আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী। কর ব্যবস্থায় সংস্কার করে সমাজে আয়ের বৈষম্য কমানোর প্রয়োজন। অর্থবছরের সময়সীমা সংশোধনের প্রস্তাবও তোলা হয়েছে।

আইএমএফের শর্ত: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ঋণের শর্ত হিসেবে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং কর সংস্কারের উপর জোর দিয়েছে। আইএমএফ-এর মতে, কর অব্যাহতি কমানো, কর প্রশাসন স্বয়ংক্রিয় করা, এবং কর ফাঁকি রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও কর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর—তিনটি আইন পর্যালোচনার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত তিন মাসে কর ফাঁকির উল্লেখযোগ্য ঘটনা উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধি: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য কোম্পানী ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও বহুজাতিক কোম্পানীর কর্মীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন
  • আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক আদায়ের জটিলতা ও ঝামেলা
  • দক্ষ জনশক্তির অভাব রাজস্ব আহরণের বড় প্রতিবন্ধকতা
  • ঔপনিবেশিক আইনের অসংগতি ও বাজেট-পূর্ব আলোচনার অভাব
  • আন্তঃসমন্বয়ের অভাব, নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী একই ব্যক্তি হওয়ার সমস্যা
  • অগ্রিম কর (এআইটি) নিয়ে জটিলতা, করপোরেট কর রিটার্ন গ্রহণ না করার সমস্যা
  • পরোক্ষ করের অতিরিক্ত নির্ভরতা ও দরিদ্রদের উপর বেশি চাপ
  • আইএমএফের শর্তাবলী ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা
  • অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর সংস্কারের উদ্যোগ
  • আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা বৃদ্ধি

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - কর সংস্কার

কমিশন গঠনের মাধ্যমে করদাতা হয়রানি কমানো ও কর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।