কমিটি: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতিতে কমিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটিগুলো দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রবন্ধে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসের কিছু উল্লেখযোগ্য কমিটি সম্পর্কে আলোচনা করব।
মূলনীতি কমিটি (১৯৪৭-১৯৫৪): ১৯৪৭ সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের অধীনে গঠিত পাকিস্তান গণপরিষদ পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের জন্য মূলনীতি কমিটি গঠন করে। ২৪ সদস্যের এই কমিটি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সংবিধানের মৌলনীতির রূপরেখা প্রণয়ন করে। এই কমিটির কাজের ফলেই ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব হয়েছিল। কমিটির অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে বিরোধিতার সৃষ্টি করেছিল, কারণ এতে পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
শান্তি কমিটি (১৯৭১): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা শহরে শান্তি বজায় রাখার জন্য পাকিস্তান প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় শান্তি কমিটি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা এই কমিটিতে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর এই কমিটি বিলুপ্ত হয়।
সংসদীয় কমিটি: বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। আইন প্রণয়ন, সরকারের কার্যক্রম তদারকি ও পর্যালোচনা, অর্থ ব্যয়ের উপর নজরদারি ইত্যাদি কাজে সংসদীয় কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী কমিটি গঠন করে।
কেবিনেট কমিটি: জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়ে মন্ত্রিসভা পর্যায়ে গঠিত হয় কেবিনেট কমিটি। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন, সরকারি ক্রয়, আইনশৃঙ্খলা, জাতীয় পুরস্কার প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেবিনেট কমিটি কাজ করে।
অন্যান্য কমিটি: প্রবন্ধে উল্লেখিত অন্যান্য কমিটির মধ্যে রয়েছে লোথিয়ান কমিটি, মাডিম্যান কমিটি, বঙ্গীয় পাটতদন্ত কমিটি, সিডিশন কমিটি, প্রশাসন ও চাকুরি পুনর্গঠন কমিটি, প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও সংস্কার কমিটি ইত্যাদি। এই কমিটিগুলো নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে এবং তাদের প্রতিবেদন সরকারের নীতি ও কার্যক্রম নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার:
কমিটিগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রমের ফলে দেশের উন্নয়ন ও সামগ্রিক অগ্রগতির পথ সুগম হয়। তবে কমিটিগুলোর কার্যকর কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।