গোলাম আযম

অধ্যাপক গোলাম আযম: বাংলাদেশের রাজনীতির এক অধ্যায়

৭ নভেম্বর ১৯২২ সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে জন্মগ্রহণকারী গোলাম আযম বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার ও দণ্ডিত করা হয়।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ঢাকায় শেষ করে গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি তবলিগ জামাত ও তমদ্দুন মজলিসের সাথে যুক্ত হন এবং ১৯৫৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।

১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির হন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি ‘শান্তি কমিটি’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং আল-বদর ও রাজাকারের মতো অর্ধসামরিক বাহিনীর সৃষ্টিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পশ্চিম পাকিস্তানেও যান এবং পাকিস্তানি নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন।

১৯৭১ সালের পর গোলাম আযম পাকিস্তানে পালিয়ে যান। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

১১ জানুয়ারী ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করে। ১৫ জুলাই ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে, ২৩ অক্টোবর ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

গোলাম আযমের জীবন ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • গোলাম আযম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন।
  • তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন।
  • যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাঁকে দণ্ডিত করা হয়।
  • ২০১৪ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।