আয়াতুল্লাহ আলি হোসেইনি খামেনেয়ী (ফার্সি: سید علی حسینی خامنهای) ইরানের একজন বিখ্যাত শিয়া মুসলিম ধর্মগুরু এবং ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের দ্বিতীয় ও বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা। ১৯৩৯ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইরানের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপ্রধান এবং ইরানের ইতিহাসে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর পর দ্বিতীয় সর্বাধিক দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিত্ব।
খামেনেয়ী তার শিক্ষাজীবনে শেখ হাশেম কজভিনি এবং আয়াতুল্লাহ মিলানি সহ অনেক গুরুদের কাছে ধর্মশিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি মাশহাদ থেকে নাজাফ ও কোম শহরে বসবাস করেন। কোমে ১৯৫৮-১৯৬৪ সালে ইসলামী সামরিক একাডেমিতে ধর্মতত্ত্ব শিক্ষাদান করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ইসলামী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাবরণ করেন। কিছু তথ্য অনুসারে, তিনি রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়াতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন, যদিও তার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই।
ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি পর পর সংস্কার কমিশনের সদস্য, উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সংস্কার রক্ষী বাহিনীর সেনাপ্রধান, তেহরানের ইসলামী ধর্মীয় নেতা, ইসলামী সংসদের স্পিকার এবং সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা কমিশনে রুহুল্লাহ খোমেনীর প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালের জুনে তার উপর গুপ্তহত্যাচেষ্টা চালানো হয় যার ফলে তার ডান হাত অচল হয়ে যায়।
১৯৮৯ সালের ৪ জুন বিশেষজ্ঞ পরিষদ খামেনেয়ীকে সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে। সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে, তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, ফতোয়া জারিকারী এবং অর্থনীতি, পরিবেশ, পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারী নীতি নির্ধারণে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী তিনি।
খামেনেয়ী পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে ফতোয়া জারি করেছেন, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার ইসলামী বিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। তিনি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে সমর্থন করেন এবং মানবাধিকারকে ইসলামী শিক্ষার মূল বিষয় বলে মনে করেন। তিনি পশ্চিমা দেশসমূহের সমালোচনা করেন।
খামেনেয়ী উত্তম আরবি ও ফার্সি ভাষায় অভিজ্ঞ। তিনি ফার্সিতে আরবি বই অনুবাদ করেছেন। তিনি তার পিতার মাতৃভাষা আজারবাইজানিতেও কথা বলতে পারেন এবং কিছুটা ইংরেজি বোঝেন। তিনি ছয় সন্তানের জনক।