রাজধানীতে আবাসন সংকট এক বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কর্মজীবীরা এবং অন্যান্যরা এর কবলে পড়েছেন। একটি উদাহরণ হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিফা রহমানের কথা বলা যায়। তিনি মিরপুর পল্লবীতে ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন, যেখানে মাসে ১৪০০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হোস্টেল না পাওয়ায় তাঁকে এমন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। তিনি এবং অনেক শিক্ষার্থী অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ বেসরকারি হোস্টেলে থাকতে বাধ্য হন, যেখানে অতিরিক্ত ভাড়া, গাদাগাদি, পড়ার পরিবেশের অভাব প্রভৃতি সমস্যার সম্মুখীন হন।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান যেমন মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা (মিরপুর ১, ২, 6, ১০, ১২ নম্বর), ফার্মগেট, গ্রিন রোড, আজিমপুর, পশ্চিম রাজাবাজার, মনিপুরিপাড়া, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী- এসব এলাকায় এ ধরণের হোস্টেলের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। এই হোস্টেলগুলোতে অনেক সময় তিন সিটের জায়গায় চার থেকে পাঁচজন ছাত্রী থাকতে বাধ্য হয়। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটও নিত্যদিনের ঘটনা।
হোস্টেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, রাজধানীতে চার-পাঁচ লাখ নারী শিক্ষার্থীর আবাসন চাহিদা রয়েছে। দেড় হাজারের বেশি বেসরকারি হোস্টেল আছে। মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের অধীনে ৯টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল আছে, মাত্র ২৭৩৮টি সিট নিয়ে। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২.৪৪% শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান থেকে আবাসন পেয়েছেন। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক জাকিয়া আফরোজের মতে, আবাসন সংকটের কারণেই বেসরকারি হোস্টেলের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। হোস্টেল নিবন্ধন ও তদারকির অভাব এই সমস্যার একটি বড় কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া মনে করেন, নীতিমালা ও জবাবদিহির অভাব এই অবস্থার জন্য দায়ী। এই অবস্থায় অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।