আইনি সুরক্ষা

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

অ্যাপভিত্তিক শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা: একটি জরুরি প্রয়োজন

বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপভিত্তিক শ্রমখাতে, রাইড শেয়ারিং, পণ্য ও খাবার ডেলিভারি সেবায় নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আইনি সুরক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন। এই শ্রমিকদের অধিকাংশই কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে স্বীকৃত নন, ফলে তাদের কাজের নিরাপত্তা, মজুরি, অধিকার এবং দুর্ঘটনার সময় ক্ষতিপূরণের কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।

সাদ্দাম হোসেন (ছদ্মনাম) নামের এক রাইডার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সাইকেলে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছেন। ২০২১ সালে কোভিডের সময় চাকরি হারিয়ে এই কাজ শুরু করেন তিনি। অনেক রাইডার ও ডেলিভারিম্যানের অভিজ্ঞতা একই রকম। তাদের টাকা হারিয়ে যায়, পণ্য চুরি হয়, দুর্ঘটনায় পড়লে কোম্পানি দায়িত্ব নেয় না। একজন রাইডার জানান, একবার ১৮ হাজার টাকার পণ্য হারিয়ে গেলে তা বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়। খাবার ডেলিভারি দেওয়া শ্রমিকদেরও একই অভিজ্ঞতা। গ্রাহক খাবার না নিলে কমিশন পাওয়া যায় না।

অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করলেও এসব শ্রমিকরা মূলত কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করেন। কিছু প্রতিষ্ঠান সীমিত বেতন বা কমিশন দেয়, কিন্তু অনেকেই সেগুলো সম্পর্কে অবগত নন। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান প্রতিটি রাইডের ১০-১৫% কমিশন কেটে রাখে। কিছু প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ সেবা বিক্রি করে।

রাইডার ও ডেলিভারিম্যানরা জানান, এই কাজ ঝুকিপূর্ণ, দুর্ঘটনার হার বেশি, এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দায়িত্ব নেয় না। সাঈদ হোসেন নামের এক রাইড শেয়ারিং চালক দুইবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান সাহায্য করেনি। অ্যাপ ব্যবহারের কোন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না বলে তাদের অভিযোগ।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস)-এর গবেষণায় অ্যাপভিত্তিক শ্রমিকদের চারটি প্রধান সমস্যা উঠে এসেছে: শ্রমিকদের অসহায়ত্ব, কাজের চাপ, ব্যক্তিগত জীবনে বিরূপ প্রভাব এবং সমষ্টিগত দাবী আদায়ের সুযোগ না থাকা। বিআইএলএস-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের কোন আইনেই এই শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে না।

২০১৮ সালে উবার-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতের রায় উবার চালকদের কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের শ্রম আইনে এসব শ্রমিকদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। জাফরুল হাসান শরিফ নামের এক আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় ন্যুনতম মজুরি নেই, খাতভিত্তিক মজুরি আছে। অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন খাতে পড়বে এবং এসব শ্রমিকদের কোন শ্রেণীতে রাখা হবে তা নিয়ে কোন নীতিমালা নেই।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫টি বিআরটিএ-র তালিকাভুক্ত রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান আছে। পাঠাও, উবার, ফুডপান্ডা এই খাতে বেশি অংশ দখলে রয়েছে। ফুডপান্ডা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রাইডারদের জন্য বীমা সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে।

আইনজীবী ও গবেষকরা বলছেন, অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা নূন্যতম মজুরি এবং অন্যান্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। এই অসুরক্ষিত পরিবেশে কাজ করার ব্যাপারে তাদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।

মূল তথ্যাবলী:

  • লক্ষ লক্ষ অ্যাপভিত্তিক শ্রমিক আইনি সুরক্ষার বাইরে
  • কাজের ঝুঁকি, দুর্ঘটনা, ক্ষতিপূরণের অভাব
  • নূন্যতম মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাব
  • শ্রম আইনে সুনির্দিষ্ট বিধানের অভাব
  • আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।