অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শিক্ষার্থীদের অর্ধবৎসরের শেষে তাদের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য একটি পরীক্ষা। ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষার ধারণা চালু ছিল, যা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে আজকের আধুনিক রূপ লাভ করেছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা এই পাবলিক পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাপের সাথে মানিয়ে নিতে এবং তাদের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত উন্নয়নে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করে। এই পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির দিক থেকে মূল্যবান প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজ করে।
ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটিশ আমলে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। পরবর্তীতে, কলকাতা, মাদ্রাজ এবং বোম্বেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই পরীক্ষার দায়িত্ব এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর অর্পিত হয়। ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন গঠন এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এরপর ভারত বিভাগের পর পূর্ববঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং অবশেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হিসেবে পরিচিত হয়। ১৯৬২ সালে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় নতুন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও কাজ শুরু করে ১৯৬৯ সাল থেকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রেও সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন এসেছে। ২০০১ সাল থেকে মাধ্যমিক এবং ২০০৩ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসএসসি পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু করা হয়েছে। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা এই সমগ্র ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতের অংশ এবং শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি নিরীক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।