সৈয়দপুর: উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলায় অবস্থিত সৈয়দপুর শহর উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও যোগাযোগ কেন্দ্র। ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কাছাকাছি শহরটি গড়ে উঠে। খরখড়িয়া নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত সমতল এলাকায় এই শহরের বসবাসকারীদের সংখ্যা প্রায় ২,৬৪,৪৬১ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা প্রায় সমান। রংপুর বিভাগের একমাত্র বিমানবন্দর সৈয়দপুরে অবস্থিত, যা শহরটিকে উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এছাড়া এশীয় মহাসড়কের অংশ এন-৫ সড়ক সৈয়দপুরের মধ্য দিয়ে গেছে।
ইতিহাস:
সৈয়দপুরের নামকরণের পেছনে কোচবিহার থেকে আগত একটি সৈয়দ পরিবারের অবদান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তারা এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে ইসলাম ধর্মের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অতীতে এটি কামরুপ রাজ্যের অধীনে ছিল। আলাউদ্দিন সৈয়দ হোসেন শাহ কামরুপ অভিযানের সময় সৈয়দপুরের কাছে কেল্লাবাড়ীতে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ১৯১৫ সালে সৈয়দপুর থানা, এবং ১৯৫৮ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় অনেক বিহারী পরিবার সৈয়দপুরে চলে আসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও বিহারীদের হামলায় অনেক নিরীহ বাঙালী প্রাণ হারায়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়া:
সৈয়দপুরের ভৌগোলিক অবস্থান ২৫.৪৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৫১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৩৯ কিলোমিটার। শহরের আবহাওয়া ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক। গড় তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং জানুয়ারী মাসে সর্বনিম্ন ১০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
অর্থনীতি:
সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে ওয়ার্কশপ। এটি শহরের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও প্রস্তুত পোশাক, কৃষিকর্ম, চীনামাটির সামগ্রী, জৈব সার, পুনর্ব্যবহৃত টায়ার থেকে তেল উৎপাদন, হালকা ধাতু শিল্প সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এখানে উল্লেখযোগ্য। অনেক ব্যাংক, বিমা কোম্পানি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত।
শিক্ষা:
শিক্ষার দিক থেকে সৈয়দপুর অত্যন্ত উন্নত। সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এখানকার একটি প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BAUST) এখানে অবস্থিত। এছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি কলেজ ও অনেক প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখানে অবস্থিত।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:
সৈয়দপুরে ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ, নট সেটেলমেন্ট কারাগার, মর্তুজা ইনস্টিটিউট, সৈয়দপুর গির্জা এবং ক্রাইস্ট চার্চ অব বাংলাদেশ সহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। শিল্প সাহিত্য সংসদ এখানকার একটি প্রাচীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
যোগাযোগ:
সৈয়দপুর বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান শহরের সাথে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যোগাযোগে সুবিধা যুক্ত।
উপসংহার:
সৈয়দপুর উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর যার রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, বিমানবন্দর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঐতিহাসিক স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই শহরটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।