শ্রমিক আন্দোলন

১৯৪৭ সালের পূর্বে বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ছিল সীমিত। চা-বাগান, টেক্সটাইল মিল ও বন্দর - এসব স্থানেই ছোটখাটো আন্দোলন দেখা গেলেও, ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। ১৯২০-২২ সালের খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় চা-বাগান শ্রমিকদের অসন্তোষ প্রকাশ পায়, যার ফলে চারগোলা উপত্যকার চা-বাগান ছেড়ে শ্রমিকরা চলে যায়। একই সময়ে, ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ও চাঁদপুর স্টিমার সার্ভিসের কর্মচারীদের ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ সালে ঢাকেশ্বরী কটন মিল শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হলেও, বারবার ধর্মঘটের কারণে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। মহামন্দাও শ্রমিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। কম্যুনিস্টদের তৎপরতা অনেক আন্দোলনের পেছনে ছিল, যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কংগ্রেস ও অনুশীলন সমিতির মতো অ-কম্যুনিস্ট সংগঠনগুলিকে সহায়তা দিতে থাকে। ১৯৩৭-৪০ সালে বস্ত্রশিল্পে ব্যাপক ধর্মঘট হয়, কিন্তু সেগুলোও সুসংগঠিত হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, চট্টগ্রামের চা-বাগান শ্রমিকরা কিছুটা সাফল্য পায়, কিন্তু দেশ বিভাগের পর কম্যুনিস্ট নেতৃত্ব ভারতে চলে যাওয়ার ফলে শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের শ্রমিকরা ছিল সবচেয়ে সংগঠিত, তবে জাতীয়তাবাদী ও কম্যুনিস্ট ইউনিয়নে বিভক্ত থাকার কারণে তাদের আন্দোলনও সীমিত ছিল। এই সময়কালে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখযোগ্য ঢাকেশ্বরী কটন মিল, মোহিনী মিল, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র মিল ও বার্মা অয়েল কোম্পানিতে সংঘটিত ধর্মঘট।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯২০-২২ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সাথে শ্রমিক অসন্তোষের প্রথম লক্ষণ দেখা দেয়।
  • ১৯২৭ সালে ঢাকেশ্বরী কটন মিল শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হয়।
  • ১৯৩৭-৪০ সালে বস্ত্রশিল্পে তীব্র ধর্মঘট হয়।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে চট্টগ্রামের চা-বাগান শ্রমিকরা কিছুটা সাফল্য অর্জন করে।
  • দেশ বিভাগের পর কম্যুনিস্ট নেতৃত্বের অভাব শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করে তোলে।