শ্রমিক অসন্তোষ

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২:৫০ পিএম

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত, দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিক অসন্তোষের সম্মুখীন। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পর 'কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা' উন্নত হলেও, প্রতিবছরই নানা কারণে কলকারখানায় শিল্প-বিরোধের ঘটনা ঘটছে। বিআইএসআর ট্রাস্টের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালে সারা দেশে ৮২টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে, যার অধিকাংশই ব্যক্তিমালিকানাধীন কারখানায়। ৮৪% ঘটনা পোশাক কারখানায় এবং বাকি ১৬% রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কারখানায় ঘটে। মজুরি বকেয়া, মজুরি বৃদ্ধির দাবি, হঠাৎ ছাঁটাই, কর্মক্ষেত্রে অপব্যবহার, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের দাবী ইত্যাদি শ্রমিক অসন্তোষের প্রধান কারণ। অসন্তোষ প্রকাশে শ্রমিকরা সাময়িক কর্মবিরতি, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, ধর্মঘট, মানববন্ধন ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করে। ২০১৬ সালে আশুলিয়ায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের ফলে ৩৪ জন শ্রমিক আটক হন এবং ৫৯টি কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। ২০১৭ সালে কমপক্ষে ৩৪৫৩ জন শ্রমিক ছাঁটাই হন। শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং ডাইফি বিরোধ নিরসনে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে, তবে পুলিশের বল প্রয়োগ অনেক সময় অস্থিরতা বাড়ায়। ২০১৭ সালে গাজীপুরে ১৩৯টি, নারায়ণগঞ্জে ৯১টি, চট্টগ্রামে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়। অপর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, মালিকানা বিরোধ ইত্যাদি কারণে কারখানা বন্ধ হয়। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা, মজুরি নিয়মিত পরিশোধ, মালিক-শ্রমিক মতবিনিময়, রাষ্ট্রীয় কারখানার উন্নয়ন, নিরাপত্তা পরীক্ষা, দমন নীতি পরিহার, শ্রমিকদের পূর্বেই জানানো ও কাউন্সেলিং, শ্রমিক ফেডারেশনকে অংশীদার মনে করা, ন্যায্য মজুরি প্রদান, শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও বিজিএমইএ-বিকেএমইএর ইতিবাচক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতেও নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, ব্যাংকের তারল্য সংকট, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি কারণে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া শ্রমিক অসন্তোষের ফলে পোশাক শিল্পে ৪০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। বিজিএমইএ ১৮ দফা দাবি খারিজ করেছে। বহিরাগতদের উসকানি, জুট ব্যবসা দখল ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথাও উঠে এসেছে। সরকার শ্রমিকদের প্রকৃত সমস্যা সমাধান এবং অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পরও শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত
  • মজুরি বকেয়া, ছাঁটাই, অপব্যবহার প্রধান কারণ
  • ২০১৭ সালে ৮২টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা
  • ত্রিপক্ষীয় আলোচনা ও পুলিশের হস্তক্ষেপ
  • বেতন বকেয়া ও ঝুট ব্যবসার দখলদারী বিতর্ক
  • বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
  • সরকারের সমাধানের প্রচেষ্টা

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।