লামা: পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত লামা, একই সাথে একটি শহর ও উপজেলার নাম। এটি বান্দরবান জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং লামা উপজেলার বৃহত্তম শহরাঞ্চল। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১২০.৯ কিমি এবং বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৯২.৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, লামা উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ১০৮৯৯৫ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৫৬৬১০ জন এবং নারী ৫২৩৮৫ জন। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৯৬৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করে।
লামার নামকরণের ইতিহাস:
লামা নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কিছু মতে, মাতামুহুরী নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ার কারণে এ নামকরণ করা হয়েছে। আবার কিছু কিংবদন্তি অনুসারে, আহলামা নামক এক মার্মা নারীর নামানুসারে এ নামকরণ হয়েছে। এই আহলামা একজন ধনী ও প্রভাবশালী মহিলা ছিলেন এবং তার আবাসস্থলের নামানুসারে পরবর্তীতে লামা খাল, লামা বাজার ইত্যাদি নামকরণ করা হয়।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলী:
১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরারাজা ধন মানিক্য চট্টগ্রাম দখল করে লামার পার্শ্ববর্তী চকরিয়া পর্যন্ত অধিকার বিস্তার করেন। ১৯২৩ সালে লামা থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় লামা ১ নং সেক্টরে অবস্থিত ছিল। লামা থানা যুদ্ধ, ত্রিশডোবা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প যুদ্ধ এবং পরিখ্যা ক্যাম্প যুদ্ধ লামার উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান লামা সফর করেন এবং উন্নয়ন কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ১৯৮২-৮৩ সালে লামাকে জেলা ঘোষণা করা হলেও তা তিন দিন পরই স্থগিত করা হয়, যা জনমনে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি করে।
লামার ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা:
লামা উপজেলার আয়তন ৬৭১.৮৩ বর্গকিলোমিটার। এটি পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এবং মাতামুহুরী নদী এ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। ধান, তামাক, আলু, আদা, বাদাম, হলুদ, তিল, তুলা ইত্যাদি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে ইত্যাদি ফলের চাষও হয়। রাবার বাগান, কয়লা ও গ্যাসের খনি আছে লামায়। তাঁতশিল্প, দারুশিল্প, করাত কল, বাঁশ ও বেতের কাজ লামার উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
লামার শিক্ষার হার ৩৪%। এখানে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা,সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ও একটি পশুচিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।
লামার দর্শনীয় স্থান:
লামার মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। মিরিঞ্জা ভ্যালি, লাকপাং ডং পাহাড়, মুরাংজা তাং পাহাড় লামার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
উপসংহার:
লামা, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও উপজেলা। এটি ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।