লাকসাম: কুমিল্লার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শহর লাকসাম। কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত এ উপজেলা শহরটি এর ব্যাপক বাণিজ্য কেন্দ্র ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। ১৯৮২ সালে থানা হতে উপজেলায় রূপান্তরিত হওয়ার পর, ১৯৮৪ সালে লাকসাম পৌরসভা গঠিত হয় এবং লাকসাম পৌরশহরের মর্যাদা লাভ করে।
ভৌগোলিক অবস্থান:
লাকসামের অবস্থান ২৩°১৪′২১″ উত্তর ৯১°০৭′২৬″ পূর্ব অক্ষাংশে। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ৭ মিটার। ডাকাতিয়া নদী, যার উৎপত্তি ভারতের রঘুনন্দন পাহাড়ে, লাকসামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৭৫ কিমি দীর্ঘ ও ২৫০ ফুট প্রশস্ত এই নদীর গড় গভীরতা ৪০ ফুট।
অর্থনীতি ও শিল্প:
ধান, আলু, বেগুন, টমেটো এবং বিভিন্ন শাকসবজি লাকসামের প্রধান ফসল। এছাড়াও, এখানে অসংখ্য ময়দার মিল, তেলের মিল, সিগারেট ও বিড়ি কারখানা এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লাকসাম বাজারসহ কয়েকটি ব্যবসা কেন্দ্রে প্রচুর ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। চালের কল, ময়দার মিল, তেলের মিল এবং ভোগ্যপণ্যের কারখানার সংখ্যা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের মাধ্যমে লাকসাম সারা দেশের সাথে যুক্ত। লাকসাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, চাঁদপুর ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানের সাথে ট্রেন যোগাযোগ নিশ্চিত করে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লাকসামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ৬ এপ্রিল, পাকবাহিনীর বোমা হামলায় আজগরা বাজারে প্রায় ২০০ জন নিহত হয়। এছাড়াও, এখানে একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বেশ কয়েকটি গণকবর রয়েছে।
প্রশাসন ও জনসংখ্যা:
লাকসাম পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ৩১টি মহল্লায় বিভক্ত। উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৫৩৬৫০।
উল্লেখযোগ্য স্থান:
লাকসামে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট কাজীর মসজিদ, দশ গম্বুজ বিশিষ্ট নবাব বাড়ি মসজিদ, আরফাননেসা মসজিদ, পশ্চিমগাঁও নবাব বাড়ি, অতুলচন্দ্র জমিদার বাড়ি, জগন্নাথবাড়ি দেবালয় ও জগন্নাথ দিঘি উল্লেখযোগ্য।
সারসংক্ষেপে:
লাকসাম কুমিল্লার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যা তার বাণিজ্যিক কার্যকলাপ, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত।