যুদ্ধ

যুদ্ধ: এক অসমাপ্ত আলোচনা

মানব ইতিহাসের সঙ্গে যুদ্ধের এক অদ্ভুত সম্পর্ক রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ, এমনকি আধাসামরিক বাহিনী - সকলেই যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে চরম হিংস্রতা, আগ্রাসন, ধ্বংস ও প্রাণহানির মর্মান্তিক দৃশ্য যুগ যুগ ধরে দেখে আসছে মানবজাতি। যুদ্ধবিদ্যা, যা কখনও কখনও 'পোলেমোলজি' নামেও পরিচিত, যুদ্ধের নানান দিক নিয়ে গবেষণা করে।

যুদ্ধের উৎস কী? অনেকেই মনে করেন, এটি মানব প্রকৃতির অংশ। অন্যদিকে, অনেকে আবার নির্দিষ্ট সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত কারণের ফলে যুদ্ধের উদ্ভব বলে মনে করেন। 'যুদ্ধ' শব্দটি সংস্কৃত মূল 'যুধ্' থেকে এসেছে, যার অর্থ 'লড়াই করা'।

যুদ্ধের ইতিহাস:

প্রাগৈতিহাসিক যুদ্ধের প্রাচীনতম প্রমাণ জেবেল সাহাবাতে পাওয়া গেছে, যা প্রায় ১৪,০০০ বছর পুরোনো। ৫,০০০ বছর আগে রাষ্ট্রের উত্থানের পর থেকেই বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে যুদ্ধবিগ্রহ চলে আসছে। বারুদের আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আধুনিক যুদ্ধের রূপ পরিবর্তন করেছে। কন‌ওয়ে ডব্লিউ. হেনডারসনের গবেষণায় দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত ১৪,৫০০ যুদ্ধ হয়েছে, যাতে প্রায় ১,২৪০,০০০,০০০ জন মানুষ মারা গেছে। এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও রোগের কারণে মৃত্যু।

যুদ্ধের লক্ষ্য:

অনেক ক্ষেত্রেই যুদ্ধের লক্ষ্য স্পষ্ট হয় না। স্পষ্ট লক্ষ্য হতে পারে অঞ্চল দখল, অর্থনৈতিক ছাড় ইত্যাদি। কিন্তু অনেক সময়ই যুদ্ধের লক্ষ্য অস্পষ্ট থাকে, যেমন - খ্যাতি অর্জন, বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাব:

যুদ্ধের ফলে মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতি, দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং দীর্ঘস্থায়ী বিদ্বেষ-অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। নারী নির্যাতন ও শিশু মৃত্যু যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি। শান্তিকামী মানুষ যুদ্ধ চায় না।

যুদ্ধের কারণ:

যুদ্ধের মূল কারণ হলো 'স্বার্থপরতা'। ক্ষমতা লিপ্সা, শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা - এই সব কারণে মানুষ যুদ্ধে জড়ায়।

উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ:

  • রাজমহলের যুদ্ধ (১৫৭৬): বাংলায় মুগল শাসনের সূচনা।
  • বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪): বাংলায় ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপন।
  • পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭): বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন।
  • ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ: কাশ্মীর সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের উগ্র রূপ।
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১): বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন।

উপসংহার:

যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, মৃত্যু ও অমানবিকতা। শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মানুষের স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতা লিপ্সা ত্যাগ করেই শুধু যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব।

মূল তথ্যাবলী:

  • যুদ্ধ হলো রাষ্ট্র, সরকার, সমাজের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ
  • যুদ্ধের মূল কারণ স্বার্থপরতা ও ক্ষমতা লিপ্সা
  • রাজমহল, বক্সার, পলাশী যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ
  • ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ কাশ্মীর সমস্যার প্রেক্ষাপটে
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ