ফেনী সদর উপজেলা: একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বর্তমানের রূপরেখা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার অন্তর্গত ফেনী সদর উপজেলা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু। ফেনী ট্রাংক রোড থেকে ৩ কি.মি. পূর্বে অবস্থিত এই উপজেলা উত্তরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে সোনাগাজী উপজেলা ও চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা, পূর্বে ছাগলনাইয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে দাগনভূঞা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এই উপজেলার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা: মোট ২২৬.১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ৫১২,৬৪৬ জন মানুষ বাস করেন। জনসংখ্যার ঘনত্ব ২,২৬৬ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটার।
প্রশাসনিক বিভাগ: একটি পৌরসভা এবং ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত ফেনী সদর উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ফেনী সদর থানার আওতাধীন।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য: ফেনী থানা গঠিত হয় ১৯২৯ সালে এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৫৮ সালে পৌরসভা গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ফেনী সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী উপজেলা দখল করে এবং ব্যাপক অত্যাচার চালায়। ধলিয়া ও দৌলতপুরে মুক্তিযুদ্ধের দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৬ ডিসেম্বর ফেনী শত্রুমুক্ত হয়।
অর্থনীতি: ফেনী সদর উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি, শিল্প ও ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। ধান, গম, ডাল, মিষ্টি আলু, মরিচ, আখ, চীনাবাদাম প্রধান কৃষি ফসল। টেক্সটাইল মিল, স্টিল মিল, জুট মিল, অয়েল মিল, রাইস মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ঔষধ ফ্যাক্টরি, টাওয়ালস ফ্যাক্টরি, লবণ ফ্যাক্টরি, কোল্ড স্টোরেজ ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বর্ণশিল্প, দারুশিল্প, সেলাই কাজ, বাঁশের কাজ ও বেতের কাজ কুটির শিল্প হিসাবে উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: উপজেলায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ফেনী সরকারি কলেজ (১৯২২), ফেনী জি এ একাডেমী (১৯৪৩), ফেনী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (১৯৬৩) উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য সেবার জন্য জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রকৃতি ও পর্যটন: ফেনী নদী ও এর আশপাশের এলাকা প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা। রাজাঝির দিঘি, বিজয় সিংহ দীঘি ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থান পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
উপসংহার: ফেনী সদর উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময়, ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আধার। এই উপজেলার বিকাশে আরও বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরী।