ফুলগাজী উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
বাংলাদেশের ফেনী জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত ফুলগাজী উপজেলা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিচিত। ফেনী জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলাটি উত্তরে পরশুরাম, দক্ষিণে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: কথিত আছে, এই এলাকায় একজন গুণী ব্যক্তি ফুলগাজী মজুমদারের নামানুসারে ফুলগাজী নামকরণ হয়। ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যের এক ব্যবসায়ী মুরাদ খান চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেন, পরে বন্যার কারণে ফুলগাজীর শ্রীপুরে যান। তাঁর ছেলে ফুল মুহাম্মদ খান ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং 'গাজী' উপাধি লাভ করেন। ১৭০১ সালে (ত্রিপুরা ক্যালেন্ডারে ১১১১) নাহার মুহাম্মদ খান তাঁর প্রাসাদে একটি বৃহৎ জলাধার নির্মাণ করেন এবং পাশে শ্রীপুর জামে মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও বিদ্যমান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফুলগাজী ২ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ১০ জুন বন্দুয়া সেতুতে ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ৬ ডিসেম্বর ফুলগাজী মুক্ত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা: ফুলগাজীর আয়তন প্রায় ১০২.১৯ বর্গ কিলোমিটার। মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদী এ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যা ১১৯,৫৫৮; পুরুষ ৫৯,৪৯৭, মহিলা ৬০,০৬১। শিক্ষার হার ৬০%।
অর্থনীতি: কৃষিকাজ ফুলগাজীর অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, গম, পাট, আলু, আখ, মরিচ এবং বিভিন্ন শাকসবজি উৎপাদিত হয়। আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে ইত্যাদি ফলের চাষ হয়। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। প্রচুর মানুষ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাস করে এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে, যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশাসন: ফুলগাজী থানা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০২ সালের ২৭ মার্চ উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এর আওতাধীন ৬টি ইউনিয়ন (ফুলগাজী, মুন্সীরহাট, দরবারপুর, আনন্দপুর, আমজাদহাট ও জিএমহাট) রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান: শ্রীপুর জামে মসজিদ এই উপজেলার ঐতিহ্যের প্রতীক। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে মুন্সীরহাট বাজার।
উপসংহার: ফুলগাজী উপজেলা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়। আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের মিশেলে এই উপজেলার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত।