ফেনী সদর

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৮:২৩ এএম

ফেনী সদর: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ফেনী জেলার প্রাণকেন্দ্র ফেনী সদর উপজেলা। ২২৬.১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২২°৫৪´ থেকে ২৩°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৮´ থেকে ৯১°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা, দক্ষিণে সোনাগাজী ও মিরসরাই উপজেলা, পূর্বে ছাগলনাইয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে দাগনভূঁইয়া উপজেলা—এই উপজেলাগুলো ফেনী সদরকে ঘিরে রয়েছে।

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, ফেনী সদরের জনসংখ্যা ৫১২৬৪৬ জন; যার মধ্যে পুরুষ ২৫৪৭৫১ এবং মহিলা ২৫৭৮৯৫ জন। ধর্মীয় জনসংখ্যার বিভাজন: মুসলিম ৪৭৭৭৭৭, হিন্দু ৩৪৪১৭, বৌদ্ধ ২৫৪, খ্রিস্টান ১১৫ এবং অন্যান্য ৮৩ জন। ফেনী নদী ও ছোট ফেনী নদী এই উপজেলার প্রধান জলাশয়। সিলোনিয়া খালও উল্লেখযোগ্য।

১৯২৯ সালে ফেনী থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। ফেনী সদরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১৭৬২ সালে ঢাকার নায়েব নাজিম মুহম্মদ আলী চৌধুরীকে ফেনী এলাকার ফৌজদার নিয়োগ করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ফলে ১৭৯০ সালে তিনি জমিদারি হারান।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফেনী সদর উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ উপজেলার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং রাজাকারদের সহযোগিতায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ধলিয়ায় এবং দৌলতপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৬ ডিসেম্বর ফেনী শত্রুমুক্ত হয়। এই উপজেলায় ৭টি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর রয়েছে।

ফেনী সদরের শিক্ষার হার ৬২.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ফেনী সরকারি কলেজ (১৯২২), ফেনী জি এ একাডেমী (১৯৪৩), ফেনী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (১৯৬৩) প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে ৪১৩টি মসজিদ, ১৭২টি মন্দির এবং ২টি গির্জা। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ফেনী জামে মসজিদ, শর্শদি শাহী মসজিদ, পাগলা মিয়ার মাযার ইত্যাদি।

ফেনী সদরের অর্থনীতি মূলত কৃষি, ব্যবসা ও শিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, গম, ডাল, মিষ্টি আলু, মরিচ, আখ, চীনাবাদাম। শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইলমিল, স্টিলমিল, জুটমিল ইত্যাদি। উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত; ২৬৫ কিমি পাকা রাস্তা, ৫৮ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৪৩০ কিমি কাঁচারাস্তা রয়েছে। রেলপথ ২৬ কিমি এবং নৌপথ ৫২ কিমি।

ফেনী সদরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও সমৃদ্ধ। ৬টি লাইব্রেরি, ১৭টি ক্লাব, ২টি মহিলা সংগঠন, ১টি শিশু একাডেমী, ৩টি সংগীত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৭টি নাট্যগোষ্ঠী, ৩টি সিনেমা হল এবং ১টি শিশুপার্ক রয়েছে। রাজাঝির দীঘি ও বিজয় সিংহ দীঘি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয়। শর্শদি বাজার, রানীর হাট, বালিগাঁও বাজার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য হাটবাজার।

ফেনী সদর উপজেলা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মূল তথ্যাবলী:

  • ফেনী সদর উপজেলা চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
  • এর আয়তন ২২৬.১৯ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫১২৬৪৬।
  • ১৯২৯ সালে থানা, ১৯৮৪ সালে উপজেলা ও ১৯৫৮ সালে পৌরসভা হিসেবে গঠিত হয়।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ৭টি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর আছে।
  • শিক্ষার হার প্রায় ৬২.৮% এবং উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
  • অর্থনীতি কৃষি, ব্যবসা ও শিল্পের উপর নির্ভরশীল।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।