সোনাগাজী উপজেলা

আপডেট: ৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪:৪৮ পিএম

সোনাগাজী উপজেলা ফেনী জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা, চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। উপজেলার নামকরণের পেছনে বেশ কিছু জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, পলাশীর যুদ্ধের পর ১৭৮০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে চাঁদ গাজী নামে এক ব্যক্তি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এলাকায় আগমন করেন। তার এক পুত্র ‘সোনাগাজী’ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়ে এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেন। সম্ভবত তার নামানুসারে উপজেলার নামকরণ হয়। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, বারো ভুঁইয়াদের অন্তর্গত এক জমিদার পরিবারের সোনাগাজী ভূঞা নামে এক ব্যক্তি উপকূলীয় এলাকায় লবণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে একটি বাজার স্থাপন করেন। এই বাজারকেন্দ্র করেই সোনাগাজী থানার প্রতিষ্ঠা হয়। মোগল আমলে ফেনীর দক্ষিণে জুগিদিয়া ও আমীরগাঁও নামে দুটি থানা ছিল যা নদী ভাঙ্গনে অন্যত্র সরানো হয়। ১৮৮৬ সালে নতুন চর উঠে আসলে সোনাগাজী নামে নতুন থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। মোগল সম্রাট শাহজাহান তার পুত্র মোহাম্মদ সুজাকে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। আরাকানী নৌ হামলা থেকে উপকূল রক্ষার জন্য সোনাগাজীতে দুর্গ নির্মাণ করেন, যার নামানুসারে এখনও কিছু এলাকা 'সুজাপুর' নামে পরিচিত।

সোনাগাজী উপজেলার আয়তন ২৮৪.৯০ বর্গ কিলোমিটার, ফেনী জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। উত্তরে ফেনী সদর ও দাগনভূঞা, দক্ষিণে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, পূর্বে ফেনী নদী ও চট্টগ্রামের মীরসরাই, পশ্চিমে ছোট ফেনী নদী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও দাগনভূঞা উপজেলা অবস্থিত। এখানে ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষিপ্রধান হলেও নারীরা বিভিন্ন শিল্পের সাথে যুক্ত। বাঁশ ও বেত দিয়ে হাজারি, খাঁচা, কোরা, ওড়া ইত্যাদি তৈরি হয়। পাটিপাতা দিয়ে পাটি ও বটনি তৈরির কাজও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। চরখোন্দকার জেলেপাড়ায় প্রায় ১০০ জেলে পরিবার বাস করে যাদের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। ১৯৭৭-৭৮ সালে শুরু হয়ে ১৯৮৫-৮৬ সালে মুহুরী সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফেনী, মুহুরী ও কালিদাস-পাহালিয়া নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে বন্যা প্রতিরোধ ও সেচের ব্যবস্থা করা হয়।

সোনাগাজীতে কুঠিরহাট, বক্তারমুনশি বাজার, মঙ্গলকান্দি, সোনাগাজী বাজার, আমিরাবাদ বাজার, নবাবপুর, মতিগঞ্জ বাজার সহ অনেক হাটবাজার আছে। মুহুরী সেতু, সাহেবের ঘাট, ফাজিলের ঘাট প্রভৃতি সেতু উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় সোনাগাজীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নবাবপুর, আহম্মদপুর, মজলিশপুর প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আমিরাবাদ ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি রয়েছে। সোনাগাজীতে বর্তমানে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাব রয়েছে। ২০০২ সালে সোনাগাজী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। সোনাগাজীর জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য উপলব্ধ হলে আমরা এই লেখাটি আপডেট করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • সোনাগাজী উপজেলা ফেনী জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
  • উপজেলার নামকরণের পেছনে জনশ্রুতি রয়েছে।
  • ২৮৪.৯০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন, ফেনী জেলার বৃহত্তম উপজেলা।
  • ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • কৃষি ও নানা কুটিরশিল্পের মাধ্যমে অর্থনীতি চলে।
  • মুহুরী সেচ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সোনাগাজী উপজেলা

জানুয়ারী ৮, ২০২৫

সোনাগাজী উপজেলায় কিছু বই এসেছে।