বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পেঁয়াজের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একটি অর্থকরী মসলা ফসল এবং অত্যন্ত লাভজনক। দেশের চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। পেঁয়াজ চাষের সঠিক পদ্ধতি জানলে কৃষকরা উচ্চমূল্য পেতে পারেন।
পেঁয়াজের জাত: বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। বারি পেঁয়াজ-১, বারি পেঁয়াজ-২, বারি পেঁয়াজ-৩, বারি পেঁয়াজ-৪, বারি পেঁয়াজ-৫, এবং বারি পেঁয়াজ-৬ এর মধ্যে বারি পেঁয়াজ-৫ গ্রীষ্ম/খরিফ মৌসুমে আবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। স্থানীয় জাতের মধ্যে তাহেরপুরী, ফরিদপুরী, ভাতি, ঝিটকা, কৈলাসনগর উল্লেখযোগ্য।
মাটি ও আবহাওয়া: উঁচু, সুনিষ্কাশিত, বেলে দো-আঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য আদর্শ। ১৫-২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৭০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা পেঁয়াজের জন্য উপযুক্ত। বর্ষাকালীন চাষের জন্য উঁচু জমি অবশ্যই প্রয়োজন।
চাষ পদ্ধতি: পেঁয়াজ সাধারণত চারা তৈরি করে রোপণ করা হয়। বীজ বপনের সময় রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন বা চাটাই ব্যবহার করা যায়। মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করা যায়, তবে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদন করা উত্তম। ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করা হয়।
সার ব্যবস্থাপনা: জমি প্রস্তুতির সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ এবং আগাম চাষের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হয়। অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হয়।
পরিচর্যা: চারা রোপণের পর প্লাবন সেচ দিতে হবে। মাটির ‘জো’ আসার সাথে সাথে চটা ভেঙে দিতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। গাছের গোড়া ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পেঁয়াজে পার্পল ব্লচ, গোড়া পচা রোগ হলে রিডোমিল গোল্ড, ডায়থেন এম-৪৫, রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি প্রয়োগ করতে হবে। থ্রিপস এবং জাব পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ক হলে গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায়। পাতা ও শিকড় কেটে শীতল ও ছায়াময় স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে। উত্তোলনকৃত পেঁয়াজ ২-৩ দিন এমনভাবে রেখে শুকাতে হবে যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। শুষ্ক ও বায়ু চলাচল যুক্ত স্থানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়।